ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: অত্যাধুনিক মাইক্রো ব্লুটুথ ডিভাইসের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক(সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিনব কৌশল নিয়েছে একাধিক চক্র। ঢাবিতে ভর্তির নিশ্চয়তায় চক্রগুলো পরীক্ষার্থী প্রতি তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে।
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে রেরিয়ে এসেছে প্রশ্ন ফাঁসের অভিনব কৌশলের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
আগামী শুক্রবার ব্যাবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীন ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষার মাধ্যমে শুরু হচ্ছে ঢাবির ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বাইরের ২১ টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অত্যাধুনিক এবং শক্তিশালী মাইক্রো ব্লুটুথ ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস করার কৌশল নিয়েছে এসব চক্র।
একাধিক পরীক্ষার্থীর সাথে প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সদস্যদের ফোনালাপের রেকর্ড থেকে জানা যায়, তারা ব্লুটুথ ডিভাইসের(টেলিযোগাযোগে সক্ষম) মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর সাথে বাইরে থেকে যোগাযোগ করবে। এ জন্য পরীক্ষার্থীর কাছে থাকবে খুবই ক্ষুদ্র একটি ডিভাইস। যার মাধ্যমে তিনি বাইরে থাকা আরেকটি ডিভাইসের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন।
ডিভাইসটি খুবই ক্ষুদ্র হওয়ায় তা বহন করতেও সমস্যা হবেনা। মেয়েদের বোরকা বা হিজাবের সাথে এটি লাগানো থাকলে তা সহজে টের পাওয়ার উপায় থাকবে না। আর ছেলেদের মধ্যে যাদের বড় চুল রয়েছে তারা খুব সহজেই চুলের মধ্যে লুকিয়ে পারবে ডিভাইসটি।
আর যাদের চুল ছোট তাদের মাথায় অসুস্থতার অজুহাতে থাকবে ব্যান্ডেজ। এই ব্যান্ডেজের মধ্যেই লুকিয়ে রাখা যাবে ডিভাইসটি।
অসুস্থতা প্রমাণের জন্য তাদের কাছে মেডিকেল সার্টিফিকেট এবং ডাক্তারি প্রত্যয়ন পত্র রাখা হবে। যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে।
কথা বললে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় এরা সাংকেতিক ভাষায় যোগাযোগ করবে।
সাংকেতিক যোগাযোগের পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়, বিভিন্ন সেটের প্রশ্ন থাকবে পরীক্ষায়। প্রশ্ন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওই পরীক্ষার্থী সংকেতের মাধ্যমে জানাবে সে কোন সেটের প্রশ্ন পেয়েছে।
যদি ‘ক’ সেটের প্রশ্ন পায় তাহলে সে ছোট করে একটি কাশি দিবে। আর তাতেই চক্রটি বুঝে যাবে সে ‘ক’ সেটের প্রশ্ন পেয়েছে। এভাবে দুটি কাশি দিলে ‘খ’ সেট, তিনটি কাশিতে ‘গ’ সেট এবং চারটি কাশিতে ‘ঘ’ সেটের সংকেত প্রেরণ করা হবে।
আর সংকেত অনুযায়ী বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমেই ওই পরীক্ষার্থীকে উত্তর জানিয়ে দেওয়া হবে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় চক্রটির টার্গেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কেন্দ্রগুলোকে।
টাকার মাধ্যমে এসব কেন্দ্রের দায়িত্বরত শিক্ষক ও পিয়নদের সাথে তারা চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। যাতে করে পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রশ্ন বাইরে বের করে আনা যায়। বিভিন্ন সেটের অন্তত একটি করে প্রশ্নপত্র বাইরে বের করে আনা হবে।
প্রশ্ন সমাধান করার জন্য কেন্দ্রের বাইরে থাকবে চক্রটির একাধিক চুক্তিবদ্ধ কোচিং শিক্ষক। তারা দ্রুত সমাধান করে উত্তর পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রেরণ করবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ‘গ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইতুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোন ভাবেই যাতে প্রশ্নপত্র বাইরে বের হতে না পারে সে ব্যাপারে যথাযথ নির্দেশ পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব কেন্দ্রে। আর প্রতিটি কেন্দ্রেই আমাদের একজন নিজস্ব পরিদর্শক থাকবেন। যারা সব সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এএম আমজাদ বাংলনিউজকে বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবো। সবাইকেই চেক করে কেন্দ্রে প্রবেশ করানো হবে। মেয়েদের সার্চ করার জন্য আমাদের মহিলা শিক্ষকদেরকে নির্দেশ দেওয়া হবে। ’
ইলেকট্রনিক ডিভাইস শনাক্তকরণ যন্ত্র কেন্দ্রগুলোতে থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বছর এরকম কোন যন্ত্র থাকবেনা। তবে ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
প্রশ্নফাঁসকারী এসব চক্রের সাথে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাদের যোগসাজোশ রয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৪