ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের অধিভুক্ত ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে বিচারপতির মেয়েসহ ৭ পরীক্ষার্থীকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এসমসয় তাদের কাছ থেকে ৭টি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়েছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে প্রশ্ন জালিয়াতির চুক্তিপত্রসহ বেশ কয়েকজনের মূল কাগজ জব্দ করা হয়। তবে এদের কাউকে আটক করা যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এএম আমজাদ আলী ও ব্যাবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলি রুবাইতুল ইসলাম বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১ পর্যন্ত ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীন ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষদের ১১৭০ আসনের বিপরীতে প্রায় ৫০ হাজার ভর্তিচ্ছু পরীক্ষা দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় আটক পাঁচজনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। এরমধ্যে সুপ্রিম কোটের এক বিচারপতির মেয়েও রয়েছেন।
ঢাবি প্রক্টর প্রফেসর ড. এএম আমজাদ আলী জানান, আটক সাত পরীক্ষার্থীর মধ্যে সানজানা বিনতে বশির, ফয়সাল কবির, আহাদুর রহমান, আরিফুল ইসলাম, নুরুল আফসার পায়েলের নাম পাওয়া গেছে।
বাকি দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এরা রাজধানীর বিভিন্ন থানায় আটক রয়েছেন বলে তিনি জানান।
প্রক্টর জানান, সানজানা বিনতে বশির (ভর্তি পরীক্ষার রোল: ৬৫৪০২৫) বিচারপতি এএনএম বশির উল্ল্যাহর মেয়ে। তাকে শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কেন্দ্র থেকে আটক করা হয়।
তিনি মোবাইল ফোনের মেসেজ দেখে ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করছিলেন। এসময় কর্তব্যরত শিক্ষক তার উত্তরপত্র জব্দ করে তাকে আটক করেন।
পরবর্তীতে তার মোবাইল চেক করেও জালিয়াতির প্রমাণ পায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সহকারী প্রক্টর রবিউল ইসলাম জানান, ‘তার মোবাইলে একটি এসএমএস আসে ‘কোন সেটের প্রশ্ন জানান’। এর পর তিনি প্রশ্নের সেট কোড জানালে তার মোবাইলে একের পর এক উত্তর আসতে থাকে। ’
লিখিত স্বীকারোক্তিতে সানজানা জানান, ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের ফার্মগেট শাখার আবদুল্লাহ নামের এক শিক্ষকের সঙ্গে তার ৩ লাখ টাকার চুক্তি হয়। আবদুল্লাহ তাকে অন্য একটি নম্বর দিয়ে বলেন, ওই নাম্বার (০১৬৭২-৪৫৮৪৯২)থেকে উত্তর সরবারহ করা হবে। এই নম্বর থেকেই তাকে উত্তর সরবারহ করা হয়।
বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্র থেকে ফয়সাল কবির নামে আরেক পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। তার ভর্তি পরীক্ষার রোল: ৬৪৮১৩৯। তার মোবাইলের ইনবক্স চেক করে বি-সেটের প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়।
আহাদুর রহমানকে আটক করা হয় আজিমপুরের অগ্রণী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে। তার ভর্তি পরীক্ষার রোল: ৬৩৮৪১০। তার মোবাইলের ইনবক্সে ‘এ’ সেটের প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়।
ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজ থেকে আটক করা হয়েছে আরিফুল ইসলাম নামে আরেক পরীক্ষার্থীকে (ভর্তি পরীক্ষার রোল: ৬৩৩৪০৯)। তার মোবাইলের ইনবক্সে ‘সি’ সেটের প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে পাশ করা নুরুল আফসার পায়েলকে আটক করা হয় ট্রিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্র থেকে। তার ভর্তি পরীক্ষার রোল: ৬৪১৪৪৬। তার মোবাইলের ইনবক্সে ‘এ’ সেটের প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়।
পায়েলের কাছে বিভিন্ন অপারেটরের ৬টি সিম কার্ডও পাওয়া যায়।
এছাড়া গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ কেন্দ্র থেকে আরও দুজনকে আটক করা হয় বলে জানান সহকারী প্রক্টর রবিউল ইসলাম।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ট্রিসার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্র থেকে জালিয়াতির আলামত দেখে ধরতে গেলে সাগর হোসেন নামে এক পরীক্ষার্থী দৌড়ে পালিয়ে যান। তার ভর্তি পরীক্ষার রোল: ৬৪৯৫০১।
পালানোর সময় তার এসএসসি ও এইচএসসি-এর মুল সার্টিফিকেটসহ গুরুত্বপুর্ণ কাগজপত্র ফেলে যান। এখান থেকে তার নাম পরিচয় পাওয়া যায়।
তিনি কুস্টিয়া পুলিশ লাইন থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। তার পিতার নাম আমিরুল ইসলাম।
‘গ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলি রুবাইতুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘নির্দেশনা থাকার পরও ক্যাম্পাসের বাইরের কেন্দ্রগুলোতে যথাযথভাবে তা পালন করা হয়না। তাই জালিয়াতির সুযোগ পেয়ে যান। ’
বাইরের কেন্দ্রগুলো থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেলে ঢাবি কর্তৃপক্ষের কিছু করার থাকেনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এএম আমজাদ বলেন, ‘যাদের আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। প্রাপ্ত নম্বরগুলো ডিভির সাহায্যে ট্রেস করে জড়িতদের শনাক্ত করা হবে। ’
** ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে নতুন কৌশল!
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৪