ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির (নীল দল) সভাপতি ও হিসাব বিজ্ঞান তথ্য পদ্ধতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোল্লা আমিনুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এ সময় তারা ওই শিক্ষকের বিভাগীয় কক্ষ ভাঙচুর করে তছনছ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও একক সিদ্ধান্তে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম তিনটি বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের এক্সপার্ট পরিবর্তন করায় এ সম্পর্কে কথা বলতে সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (নীল দল) ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতি।
এ সময় দু’সমিতির নেতারা শনিবারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি বিভাগের এক্সপার্ট পুনর্বহালের জন্য উপাচার্যের কাছে দাবি জানান। এতে ক্ষুব্ধ হন উপাচার্য মোহিত উল আলম। এ সময় তিনি পদত্যাগের হুমকি দেন। তাদের সঙ্গে উপাচার্যের কথা কাটাকাটি হয়। ফলে কোন রকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন দু’সমিতির নেতারা।
এ ঘটনার জের ধরে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির (নীল দল) সভাপতি মোল্লা আমিনুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
এমন অভিযোগ করে এ শিক্ষক নেতা বলেন, শিক্ষক রেজওয়ান আহমেদ শুভ্র ও মাসুম হাওলাদারের মদদে ডিপার্টমেন্টাল কক্ষে বসা থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের ৫০/৬০ জন নেতাকর্মী আমার কক্ষে প্রায় ২০ মিনিট তাণ্ডব চালায়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি জাকিবুল হাসান রনি ও সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম রানা উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমার কক্ষের জানালার গ্লাস, চেয়ার, টেবিল, লকার ও আলমারি ভেঙ্গে তছনছ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ভিসি স্যারের কাছে ওই দাবি জানালে তিনি আবেগতাড়িত হয়ে পদত্যাগের কথা বলেন। এটা ব্যক্তিগত কোন দাবি নয়, একাডেমিক দাবি, এমন কথা বলার পর ভিসি স্যার তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজওয়ান আহমেদ শুভ্র’র মদদে এ শিক্ষক লাঞ্ছিত ও ভাঙচুরের পাশাপাশি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দুপুরেই উপাচার্যের পক্ষে আবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার ড. হুমায়ুন কবির জানান, উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি স্রেফ গুজব। তিনি ক্যাম্পাসেই আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহাবুব বোরহান জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ভেবেছে শিক্ষক সমিতির চাপের মুখে ভিসি স্যার ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে চাইছে। এটা ভেবেই ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। ভাঙচুর ও লাঞ্ছিতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না বলেও দাবি করেন প্রক্টর।
সূত্র মতে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম রানা গত ৪ সেপ্টেম্বর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বঙ্গবন্ধু কল্যাণ পরিষদের সদস্য গাড়ি চালক রফিকুল ইসলামকে বেদম মারপিট করে। এ ঘটনায় প্রতিবাদে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা রোববার আন্দোলনে নামে এবং রানার ছাত্রত্ব বাতিলের দাবি জানায়।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য সাতদিনের মধ্যে এ ঘটনায় দোষীদের বিচারের আশ্বাস দেয়ার পর মূলত এ ঘটনাকে আড়াল করতেই সুকৌশলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ উপাচার্যের ঘটনাটিকে ইস্যু করে তাকে পক্ষে টানতেই সোমবারের ঘটনা ঘটায়।
এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ছাত্রলীগ সভাপতি জাকিবুল হাসান রনি মুঠোফোনে সাড়া দেননি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৪