ঢাকা: স্নাতকোত্তর পরীক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা, শেষ পর্বের ভর্তি ও প্রথম পর্বের ফরম পূরণের কাজ চলছে। একদিন পর (বৃহস্পতিবার) থেকেই শুরু হবে চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা।
এছাড়া নিয়মিত ক্লাশ ও প্রশাসনিক কাজ তো আছেই। তাই কলেজের সার্বিক কাজ স্বাভাবিক চলার পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও স্থায়ী সমাধান হওয়া জরুরি।
মঙ্গলবার বিকেলে বাংলানিউজের কাছে সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ ড. দিলারা হাফিজ এভাবেই ওই কলেজের কার্য্যক্রম চালু রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
গত সোমবার বিকেলে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে পদ বঞ্চিত একাংশ কর্মীদের গাড়ি ভাঙচুর, মঙ্গলবার আন্দোলনের ফলে শিক্ষা কায্যক্রম সাময়িক ব্যহত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যক্ষ বলেন, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই চাকরিজীবি। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে কলেজের প্রশাসনিক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজ করে কর্মস্থলে ফিরে যায়। কলেজে এসে হঠাৎ সব কাজ বন্ধ শোনার পর তাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
দিলার হাফিজ বলেন, কোনো দলের কমিটি নিয়ে এবারই প্রথম এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সবার আন্তরিকতায় অবশ্য কয়েক ঘণ্টা কার্য্যক্রম বন্ধ থাকার পর সব কাজ শুরু হয়। আশা করছি আগামীকাল থেকেই আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
তিনি বলেন, নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিত একাংশ ছাত্রলীগের কর্মীদের ভাঙচুরের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্য প্রতিবেদন তারা জমা দেবে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতাও ছিলো অনেক ভালো।
বুধবার থেকে সব কাজ সুষ্ঠুভাবে চলবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আনিছ ফাতেমা বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে অনার্স পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ সমেয় বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেবে। তাই সার্বিক বিষয়ে নিরপত্তা দেওয়া কলেজের সবার দায়িত্ব। এই দায়িত্ব কোনো দলের কর্মীরাও এড়িয়ে যেতে পারে না।
তিনি বলেন, ৫২ হাজার ৪৬২ জন শিক্ষার্থী এই কলেজে পড়াশোনা করে। এর মধ্য প্রায় শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী প্রতিদিন কলেজে উপস্থিত থাকে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার বিকেলে সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখার ছাত্রলীগের দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণার পর পদবঞ্চিত একাংশ ছাত্রলীগের কর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করে। দুই ঘণ্টা সড়কে গাড়ি ভাঙচুর করার পরের দিন মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত আন্দোলন চলে।
প্রত্যক্ষদর্শী, কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জানান, সকাল থেকেই পদবঞ্চিত একাংশ ছাত্রলীগের কর্মীরা কলেজে অবস্থান করে। এরপর দশটার পর থেকে স্লোগান, মিছিল ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে তারা।
এক পর্যয়ে লাঠি হাতে নিয়ে প্রধান সড়কে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন।
তারা জানান, সকাল থেকেই কলেজের সব প্রশাসনিক কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। তাদের চাপের মুখে এক পর্যায়ে কলেজের পক্ষ থেকে প্রধান ফটকে তালা দেওয়া হয়।
এক পর্যায়ে বেলা ১১টার দিকে প্রশাসনিক কাজ বন্ধ করে দেন শিক্ষকরা। এরপর বেলা সোয়া একটার দিকে জরুরি সভা শেষে প্রশাসনিক ও শিক্ষার কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়।
কলেজ প্রশাসন সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে নতুন কমিটির সভাপতি কাজী মিরাজুল ইসলাম (ডলার) ও চারটার দিকে সাধারণ সম্পাদক মানিক হোসেন কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেন।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এস এম মিরাজুল ইসলাম মাহফুজ বাংলানিউজকে জানান, নতুন ওই কমিটি বাতিল বা স্থগিত না করলে তাদের আন্দোলন চলবে।
এসময়ে তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমরা চাই সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের কমিটি হোক। সবাই যাকে মেনে নেবে আমিও তাকে নেবো।
এ ঘটনায় সোমবার রাত থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের দেখা গেছে।
সার্বিক বিষয়ে বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (অসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, কলেজের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখার স্বার্থে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োজিত আছে। যতদিন পরিবেশ একেবারে শান্ত না হবে ততদিন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৪