ঢাকা: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবাসে বোমা হামলাকে ‘হীন-উদ্দেশ্যে প্রণোদিত’ ঘটনা উল্লেখ করে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেছেন, এই হামলা ছাত্র-শিক্ষকদের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ এবং সংহতির উপর সুগভীর মৌলবাদী চক্রান্ত।
এ ঘটনায় স্তম্ভিত ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধতার প্লাটফর্ম ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’।
পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এই রকম হামলা করে আমাদেরকে কখনোই বিশ্ববিদ্যালয় বিমুখ করা যাবে না। এই রকম ন্যাক্কারজনক হামলা করে আমাদের বিবেককে কখনই স্তব্ধ করে দেওয়া যাবে না। ’
গত বুধবার বন্দরনগরী থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে ফতেয়াবাদের ছড়ারকুলে দুটি শিক্ষকবাসে বোমা হামলা চালায় দুস্কৃতকারীরা। এতে ১১ শিক্ষকসহ ১৪ জন আহত হন, তাদের অনেকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ইসলামী ছাত্র শিবিরের ৯৫ নেতাকর্মীকে আসামি করে প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়েছে।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার আহত সহকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে এক বিবৃতিতে এই দৃঢ়তার কথা জানালো ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর প্রদানকারী শিক্ষকরা হলেন- রাহমান নাসির উদ্দিন, রাজীব নন্দী, মাহমুদুল সুমন, সৌভিক রেজা, ফাতেমা শুভ্রা, শোয়াইব জিবরান, কাজী শুসমিন আফসানা, সেলিম রেজা নিউটন, মানস চৌধুরী, জোবাইদা নাসরীন, ফাহমিদুল হক, স্বাধীন সেন, মোঃ নূরুজ্জামান, মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান, বখতিয়ার আহমেদ, সাহিদ সুমন, মো: দেলোয়ার হোসেন, মো: ফারুক হোসেন, মোক্তার আহমেদ চৌধুরী, সাদাত-আল-সাজীব, কাজীম নূর সোহাদ, এবং হাসান ফয়সাল।
গত বুধবারের হামলার আগেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্র শিবির নিয়ন্ত্রিত সোহরাওয়ার্দী হল থেকে অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধারের পর প্রশাসন হলটি সিলগালা করে দেয়। এর জেরে ছাত্র শিবির ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে অবরোধের ডাক দেয়। অবরোধের সময়ও একাধিকবার শিক্ষার্থীদের শাটল ট্রেন ও শিক্ষকবাসে ককটেল নিক্ষেপ ও হামলার কিছু ঘটনা ঘটে।
ক্ষুব্ধ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসব ঘটনা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এখানে শিক্ষকদের অপরাধ কী বা কোথায়? কেন শিক্ষকদেরকে বোমা মেরে আহত করা হলো? নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বা ক্লাস এবং পরীক্ষার কাজ করা কি অপরাধ? শিক্ষার্থীদের সুপারভাইজ করতে বা নিজের গবেষণার কাজ করতে ক্যাম্পাসে যাওয়া কি অপরাধ? নাকি একাডেমিক কমিটি/প্ল্যানিং কমিটির সভায় অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক কাজ ত্বরান্বিত করতে যাওয়াও অপরাধ? যদি তা না-হয় তাহলে কেন শিক্ষকদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কারণে বোমা মেরে রক্তাক্ত করা হলো?
কিংবা ‘উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার জীবনকে বেছে’ নেওয়ার জন্যই কি এই ‘প্রতিদান’, এমন প্রশ্নও তুলেন শিক্ষকরা।
বিবৃতিতে শিক্ষকরা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর যেকোনো ধরনের হামলায় এদেশের সকল সংবেদনশীল মানুষের আহত হওয়ার কথা। আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাকে একটি গণমুখী-কমিটমেন্টের দার্শনিক জায়গা থেকে ধারণ করি বলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে কোনো অন্যায় সংঘটিত হলে তা আমাদেরও গভীরভাবে বেদনার্ত করে, আমাদের ভেতর থেকে আন্দোলিত করে এবং আমাদের ভেতরে ক্ষোভের জন্ম দেয়। ’
শিক্ষকরা আরো যুক্ত করেন, শিক্ষার্থীদের নানান দাবি-দাওয়া থাকতে পারে। সেসব দাবির কিছু ন্যায্যাতা কিংবা অন্যায্যাতা থাকতে পারে এবং প্রশাসনের সঙ্গে তা নিয়ে দেনদরবারও হতে পারে। কিন্তু তার পদ্ধতি কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাসে বোমা হামলা করে শিক্ষকদেরর রক্তাক্ত করে নয় কিংবা শিক্ষার্থীদের শাটল ট্রেনে হামলা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করে নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৪