ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল এলাকায় আলোকচিত্রী ইমতিয়াজ বেগ ও তার দুই ভাগনির উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দু’টি পক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ হয়েছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় সময় শহীদ মিনারের একদিকে ‘সন্ত্রাসীদের কবল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচাও’ ব্যানারে পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করে ‘ব্রতী’ নামের একটি সংগঠন।
এর ঠিক বিপরীত পাশে শহীদ মিনারের মূল বেদীতে উঠার সিড়ির উপর দাঁড়িয়ে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অশ্লীলতা এবং বহিরাগতদের উৎপাত বন্ধ কর’ ব্যানারে সমাবেশ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। তারা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বহিরাগতদের হাত থেকে বাঁচাও’, ‘অন্যায় সহ্য করা হবে না’ সহ বিভিন্ন রকমের স্লোগান দিতে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাবি শিক্ষার্থীদের স্লোগান চলাকালে ব্রতীর মানববন্ধনেও উপস্থিত বক্তারা বক্তব্য দিতে থাকেন। এরপর চলে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। এক পর্যায়ে দু‘পক্ষই একইসঙ্গে জাতীয় সংগীত গাইতে শুরু করে। ফলে দুই মানববন্ধনের মাইক্রোফোনের আওয়াজে পুরো শহীদ মিনার এলাকায় হট্টগোল সৃষ্টি হয়। এসময় অসংখ্য পুলিশ সদস্য দু‘পক্ষকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকেন।
সমাবেশে ‘অশ্লীলতা এবং বহিরাগতদের উৎপাত বন্ধ’ করার দাবি জানিয়ে ঢাবি শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন অসংখ্য বহিরাগত প্রবেশ করে এবং এরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় অসামাজিক কার্যকলাপ করে থাকে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আলোকচিত্রী ইমতিয়াজ বেগের উপর হামলার ঘটনা সম্পর্কে তারা দাবি করেন, গণমাধ্যমে ওই ঘটনার একদিকের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বক্তব্য কেউ তুলে ধরেনি। ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয়েছে।
এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ‘ব্রতী’র হয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত বিজ্ঞ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন শহীদ মিনারে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।
তিনি বলেন, আমার কাছে কিছু মেয়ে অভিযোগ করেছে। তাই বিচারের দাবিতে এখানে এসেছি। আমরা বিএনপি-জামায়াতের লোক নই। দুষ্কৃতিকারীও নই।
এসময় দু’পক্ষ পরস্পরকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান ও গান পরিবেশন করতে থাকে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দু’পক্ষই তাদের কর্মসূচি শেষ করে।
গত বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পুকুরঘাটে দুই ভাগনিকে নিয়ে বেড়াতে এসে হামলার শিকার হন বেগার্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফির পরিচালক আলোকচিত্রী ইমতিয়াজ আলম বেগ। এসময় তার দুই ভাগনিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ঘটনায় ওই দিন শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও একটি মামলা দায়ের করেন ইমতিয়াজ বেগ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের সহায়তায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে চিহ্নিত করে।
আটক চারজন হচ্ছেন- উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন, গণিত বিভাগের জহিরুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাসুম ও পরিসংখ্যান বিভাগের জিসান। এরা সবাই প্রথম বর্ষের ও শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্য
পাল্টাপাল্টি সমাবেশের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী বলেন, ব্রতী নামের সংগঠনটি সমাবেশ করার অনুমতি নিলেও ভিন্ন ব্যানারে একাধিক সংগঠন মানববন্ধনে উপস্থিত হয়। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মানববন্ধন করে।
তিনি বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত চিহ্নিত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু এইভাবে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করে বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, যে ঘটনাটি ঘটেছে, এতে যে পক্ষই দোষী হোক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম ঘটনা কাঙ্ক্ষিত নয়। ফেসবুকের কারণে বিষয়টি এতো জটিল আকার ধারণ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৪