জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: প্রধানমন্ত্রীর ‘সাউথ সাউথ কো-অপরাশেন ভিশনারি অ্যাওয়ার্ড’ অর্জনকে গণতন্ত্রের বিজয় দাবি করেছেন সরকার ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা।
প্রধানমন্ত্রীর এই অর্জন সরকারের উন্নয়নের স্বীকৃতি বলে মন্তব্য করার পাশাপাশি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করায় বিএনপির কড়া সমালোচনাও করেন তারা।
সংসদ সদস্যরা বলেন, বিএনপি জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিচ্ছে। একই সময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সাফল্যের প্রমাণ দিচ্ছেন বিশ্ব দরবারে।
রোববার (৩০ নভেম্বর) রাতে দশম জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনের সমাপনী দিবসে এসব আলোচনা করেন সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।
জাতিসংঘের ‘সাউথ সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারি অ্যাওর্য়াড’ পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব সাধারণ উত্থাপন করেন সরকার দলীয় সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রস্তাব সাধারণের ওপর আলোচনার সুযোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে আলোচনার সূত্রপাত্র করেন সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এরপর আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক আলী আশরাফ, আব্দুল মতিন খসরু, মাহবুব-উল আলম হানিফ, বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মইনুদ্দিন খান বাদল, রাশেদ খান মেনন, উপাধক্ষ্য আব্দুল শহিদ, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজ ভান্ডারী, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, ড. হাছান মাহমুদ, বিএনএফ প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, হাজী মো. সেলিম পঙ্গজ দেবনাথ, তারানা হালিম, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী।
আলী আশরাফ বলেন, আজও ষড়যন্ত্র চলছে। আজকে সমস্ত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে মইনুদ্দিন খান বাদল বলেন, তিনি নির্বাচনে জিততে না পারলে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয় না। তাই নির্বাচনে না এসে আজ বিদেশিদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা প্রসঙ্গে বলেন, তারা তো মামলায় বিশ্বাসী নয়, তারা তো চূড়ান্ত হামলায় বিশ্বাসী। সরকারে থেকে বিরোধীদের উপর চূড়ান্ত হামলা করছেন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে থাকলে মামলা-হামলা খেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যদি কেউ তার ভিত্তিমূলে আঘাত করে তাহলে তাকে আক্রমণের শিকার হতেই হবে।
আবদুল মতিন খসরু বলেন, এমডিজি গোলের প্রথম ৬ টি আমরা অজর্ন করতে সক্ষম হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছেন।
কুমিল্লায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে খসরু বলেন, খালেদা জিয়া সেখানে বলেছেন তারা ক্ষমতায় এলে আমরা নাকি দেশে থাকতে পারবো না। আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছি।
ফারুক খান বলেন, খালেদা জিয়া তার আমলে দেশের জন্য পুরস্কার তো নয় বরং তিরস্কার নিয়ে আসতেন।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, খালেদা জিয়া জনগণের কাছে আস্থা হারিয়ে আজ বিদেশিদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন।
সংলাপ বিষয়ে হানিফ বলেন, মানুষ আর সংলাপ চায় না। বাংলাদেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চায়।
বিরোধী দলীয় সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ পুরস্কার পাওয়ায় গোটা বাংলাদেশের মানুষ আজ আনন্দিত।
তিনি বলেন, দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যখন এ ধরনের বিরল সম্মান অর্জন করেন তখন গোটা জাতি গর্বিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই অর্জন গোটা জাতির অর্জন, গণতন্ত্রের অর্জন।
ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একটি দল সরকারের অর্জনকে ম্লান করে দিতে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
সিপিএ ও আইপিইউ নির্বাচনে বাংলাদেশের অর্জনের কথা তুলে ধরেন রশিদ।
দেশ ও সরকারের বড় বড় অর্জনগুলো পিছনে জাতীয় পার্টির অবদান অনেক বেশি দাবি করে ফিরোজ রশিদ বলেন, জাতীয় পার্টি গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে জাতীয় পার্টি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
এ সময় তিনি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার কথা তুলে ধরে বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অংশ নেওয়ার সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে গণতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন তিনি।
ফিরোজ রশিদ বলেন, জাতীয় পার্টি সংসদে না থাকলে প্রধানমন্ত্রীর এ অর্জন সম্ভব হতো না। অন্য কোন দল থাকলে সংসদ সব সময় ফাঁকা থাকতো। ফাইল ছোড়াছুড়ি হতো। আমরা জাতীয় পার্টি গঠনমূলক সমালোচনা করে গণতন্ত্রকে সামনে এগিয়ে নিতে চাই।
সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, সীমিত সম্পদ দিয়ে উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশপ্রেম আর বিচক্ষণ নেতৃত্বের মাধ্যমে ক্ষুধা, দারিদ্র্য বিমোচন, চিকিৎসা সেবাসহ মানব কল্যাণে অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী ‘সাউথ সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারী অ্যাওর্য়াড’ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রুস্তম আলী ফরাজী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মানব কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেন।
জনগণের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে কমিউনিটি ক্লিনিকেও এমবিবিএস ডাক্তার দেওয়া হচ্ছে। সোশাল নেটওর্য়াক গড়ে তোলায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন রুস্তম আলী ফরাজী।
মানব কল্যাণে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন পদক পাওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।
হাজী মো. সেলিম বলেন, শিক্ষা, শান্তি, চিকিৎসা খাতের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে উপদেশে তাক লাগানো সফলতার কারণে প্রধানমন্ত্রীকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকে শান্তির প্রতীক।
ফজিলুতন্নেসা বাপ্পী বলেন, সার্বজনীন শিক্ষা, সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত, সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে অভূতপূর্ব সফলতা অর্জনের স্বীকৃতি এ ভিশনারি অ্যাওর্য়াড।
বিগত সময়ে বিএনপি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে বাপ্পী বলেন, বাংলাদেশে থাকতে হলে স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে থাকতে হবে। নইলে পাকিস্তান চলে যেতে হবে।
সংসদ সদস্য তারানা হালিম বলেন, এ পুরস্কারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০২১ সালের ভিশন জয়ী হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২১০৪
** বিদেশিরা এখন বিনিয়োগের জন্য আকৃষ্ট হচ্ছে
** বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে দেখে যেতে পারবো
** খালেদার বক্তব্যে সংসদে ক্ষোভ
** স্বল্প ব্যয়ে উন্নত গণপরিবহন সেবা চালুর পরিকল্পনা
** ফেসবুক নয়, প্রশ্ন ফাঁসকারীদের শাস্তি দিতে হবে
** বর্তমান ইসির অধীনে ১৮৭৩টি নির্বাচন সম্পন্ন
** লতিফ সিদ্দিকী গ্রেফতার, সংসদকে জানালেন স্পিকার
** বছরের সমাপনী অধিবেশন শুরু