ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

কর্মমুখী শিক্ষা দেবে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়

সালাহ উদ্দিন জসিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
কর্মমুখী শিক্ষা দেবে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: যুগোপযোগী ও কর্মমুখী শিক্ষার পাশাপাশি মাযহাব ও ফিকহি মতবিরোধ দূর করে আলেমদের একাত্ম করতে চায় নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।
 
রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্থায়ী ক্যাম্পাসে উপাচার্য ড. আহসান উল্লাহ একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলানিউজকে এ কথা জানান।


 
ড. আহসান উল্লাহ বলেন, আমাদের দেশে মাদরাসা শিক্ষা বা, ধর্মীয় শিক্ষার বিভিন্ন মাধ্যম আছে। প্রতিটি ভিন্ন-ভিন্ন ধরনের শিক্ষা দিয়ে থাকে; কোনোটারই সমন্বয় নেই। আলেমদের দাবি ছিল, মাদরাসা শিক্ষায় সমন্বয়ের জন্য স্বতন্ত্র ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। সে স্বপ্নপূরণ হয়েছে। আমরা সবার সঙ্গে সমন্বয় করে যুগোপযোগী ও কর্মমুখী শিক্ষা দিতে চাই।

মাযহাবসহ ফিকহি বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ দূর করে আলেমদের একাত্ম করার ব্যাপারেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
 
দেশের আলেম সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি ও জনসাধারণের স্বপ্ন পূরণে চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লিখিত আদেশ দ্বারা ধানমণ্ডির অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেছে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।
 
সরেজমিন দেখা যায়, ধানমণ্ডি লেক সংলগ্ন ‘শিক্ষা বোর্ড কম্পিউটার কেন্দ্র ঢাকা’র চার তলা ভবনের একটি অংশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, উপ-রেজিস্ট্রার, পরিদর্শক, সহকারী রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত সাতজন নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়টি।
 
ইতিমধ্যে, সারাদেশের ফাযিল-কামিল মাদরাসাগুলোকে অন্তর্ভুক্তি, ২০১৫-১৬ সেশনে চার বছর মেয়াদি ফাযিল (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি ও তিন বছর মেয়াদি ফাযিল (পাস) শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

অবশ্য এখনও সিন্ডিকেট গঠন না হওয়ায় অনেক কাজই করতে পারছে না ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে খুব শিগগির সিন্ডিকেট গঠন করা হবে বলে জানান, উপ রেজিস্ট্রার ড. মো. আবু হানিফা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেবার ‍আগে ড. আহসান উল্লাহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন দায়িত্ব, সামনে প্রত্যাশার পাহাড়- কীভাবে পূরণ করবেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড. আহসান উল্লাহ বলেন, সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য আছে। অপেক্ষা করতে হবে; উন্নতির দিকে পরিবর্তন চাই। আমার কাছে মাদরাসা শিক্ষা আলাদা কিছু নয়, অন্যশিক্ষার মতোই।
 
তিনি বলেন, অনেক আন্দোলন ও দাবির প্রেক্ষিতে আলেম সমাজের এই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবং প্রথিতযশা আলেমদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে চাই।

পড়াশোনার মানোন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছি। জেলাশহর গুলোতে প্রশিক্ষণকেন্দ্র করে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। শুধু অংশগ্রহণ আর ভাতা নেওয়া নয়, প্রশিক্ষণগুলো যাতে বাস্তবমুখী হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবো। শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের অ্যাওয়ার্ড দেবার ব্যবস্থা থাকবে- বলেন তিনি।
 
উপাচার্য বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি গবেষণা জার্নাল ও একটি সাধারণ জার্নাল প্রকাশ করবো। যেখানে শিক্ষক ও গবেষকদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীরাও লিখবেন। বর্তমানে ৩১টি মাদরাসায় পাঁচটি বিষয়ে (কোরআন, হাদিস, দাওয়া, ইসলামের ইতিহাস ও আরবি সাহিত্য) ফাযিল চালু আছে। কর্মমুখী আরও কিছু বিষয় অনুমোদন দেবো। সেই সঙ্গে আরো কয়েকটি মাদরাসায় অনার্স চালু করা হবে।

ড. আহসান উল্লাহ বলেন, ধর্মীয় বিষয়ে সরকারের বিরোধিতা নয়, সহায়তা করবো। ভুল-ত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দেবো। মাদরাসা শিক্ষার সিলেবাসে কোনো রদবদল প্রয়োজন হলে উচ্চতর গবেষণা কমিটি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবো। ইতিমধ্যে আমরা সব শ্রেণির পাঠ্যসূচি নিয়েছি। আলেমদের সমন্বয়ে উচ্চতর একটি কমিটি গঠন করে গবেষণা করবো। সিলেবাসের ওপর কিছু সুপারিশ করে একমুখী নয়, বহুমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করবো।
 
ফাযিল ও কামিল পর্যায়ের মাদরাসাকে অধিভুক্ত করে (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে) যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে ‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বিল’ ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদে পাস হয়।
 
ওই বিলে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণসহ যাবতীয় বিষয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়। ফাযিল ও কামিল পর্যায়ের মাদরাসার অধিভুক্তি, স্বীকৃতি, বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক প্রোগ্রামের অনুমোদন এবং বাতিলের ক্ষমতা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব, মাদরাসা টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ এবং বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীনের মহাসচিবকে সদস্য রাখার বিধান রাখা হয়েছে।

ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাবে www.iau.edu.bd এই ওয়েবসাইটে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
এসইউজে/এসইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।