ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

জাবিতে সাংবাদিক নির্যাতন হয়, বিচার হয় না!

ওয়ালিউল্লাহ ও নুর আলম হিমেল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
জাবিতে সাংবাদিক নির্যাতন হয়, বিচার হয় না!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) একের পর এক সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনায় ছাত্রলীগের কতিপয় সন্ত্রাসী জড়িত।

কিন্তু কোনো ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার করছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রলীগও এসব সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রত্যেকটি নির্যাতনের ঘটনার বিচার চেয়ে স্মারকলিপি, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচিসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করা হলেও টনক নড়েনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এমনি অভিযুক্তদের বাঁচাতে উল্টো হয়রানি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের।

বিচারহীনতার এই অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বারবার প্রশাসনে অনুরোধ জানালেও প্রশাসন কারো কথাই কর্ণপাত করছে না। ফলে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে সন্ত্রাসীরা। অভিযোগ রয়েছে, যথাযথ বিচার না হওয়ার কারণেই সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৮ জুন এক তরুণীকে অপহরণকারীর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে শাখা ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নামধারী নেতা-কর্মীদের হাতে গুরতর জখম হন বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জাবি প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম।
 
এ ঘটনায় মহিতোষ রায় টিটো, ইকরাম উদ্দিন অমি ও ইকরাম নাহিদকে সাময়িক বহিষ্কার করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ঘটনার ৪ মাস এবং তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ৫০ দিনেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কোনো বিচার করা হয়নি জড়িত সন্ত্রাসীদের। যার কারণে অভিযুক্তরা নির্বিঘ্নে ক্যাম্পাসে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

বিচারের দাবিতে আগামী ১৭ এবং ১৮ অক্টোবর প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করার আল্টিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকরা।

এর আগে গত ৪ জুন (শনিবার) বিডি প্রেস ডট নেট’র জাবি প্রতিনিধি আবু রায়হানের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মী শরীফ হোসেন লষ্কর ও রিয়াজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫/৬জন ছাত্রলীগ কর্মী। এ ঘটনায় শরীফ হোসেন লস্কর ও রিয়াজুল ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়লেও এখন পর্যন্ত বিচার পাননি আবু রায়হান।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়ান নিউজ বিডি’র জাবি প্রতিনিধি মো. ইউসুফ জামিল বিশ্ববিদ্যালয় বটতলার খাবারের দোকানে খাবার খেতে গেলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে বেধড়ক মারধর করে মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ঘটনার বিচার চেয়ে জামিল অভিযোগপত্র জমা দিলে তাকে হয়রানি করা হবে বলে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ইঙ্গিত দেন। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বাঁচানোর জন্যই এ ধরনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়। পরে ৮ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর এ ঘটনায় আর কোনো তদন্ত হয়নি।

২০১৫ সালে ২৭ অক্টোবর (শুক্রবার) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় দৈনিক ভোরের ডাকের জাবি প্রতিনিধি রেজাউল করিম হীরার ওপর অতর্কিত হামলা চালায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মী জার্মান আলী প্রিন্স। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েই দায় সেরেছে প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকরা অনবরত প্রশাসনের কর্মরত ব্যক্তিদের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় হয়ত প্রশাসন ক্ষোভের জায়গা থেকে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার করছে না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের বোঝা উচিত প্রশাসনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্যই এই দুর্নীতি আর অনিয়মের সংবাদগুলো তাদের জানা প্রয়োজন। এতে প্রশাসনের কার্যক্রমে যেমন স্বচ্ছতা থাকে তেমনি কাজগুলোও গতিশীল হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি বেলাল হোসাইন রাহাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারহীনতার যে অপসংস্কৃতি মাথা চাড়া দিয়ে উড়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুখকর নয়। যেখানে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নেই, সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা তো চিন্তাই করা যায় না। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি থাকবে এই অপসংস্কৃতি দূর করে এই সব ঘটনাগুলো সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল বলেন, এ সব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে চূড়ান্তভাবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষক মঞ্চের মুুখপাত্র রায়হান রাইন বলেন, প্রশাসন আসলে কোনো অন্যায়ের প্রতিকার করছে না। শিক্ষকদের ওপরও নিপীড়ন হলো, এ ঘটনায় দিন-তারিখবিহীন টানা কর্মসূচি ছিল। সে অর্থে পরবর্তী সিন্ডিকেটে যদি সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার না করা হয় তবে আমরাও কর্মসূচি দেবো।

বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, অন্যায়কে কখনও আমরা সমর্থন করি না। আগের ঘটনাগুলো মনে নেই। তাই সে বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। কিন্তু সর্বশেষ ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি উপাচার্যের বিবেচনায় রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।