নির্দেশনা অনুযায়ী, এ বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজটির ডিগ্রিতে ভর্তির জন্য সর্বনিম্ন ৩ হাজার ২০২ টাকা এবং মাস্টার্সে সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৮০০ করে ব্যাংকে জমা দেন ১১৬ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা জমা হয়নি জানিয়ে ফের শিক্ষার্থীদের টাকা পরিশোধের নোটিশ জারি করা হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরেই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষের দু’জন কর্মী ব্যাংকের ভেতরে সবসময় অবস্থান করেন। তাদের বাইরে কোনোভাবেই কোনো রশিদ সংগ্রহ করা যায় না। রশিদপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা বেশি আদায় করেন তারা। এবার বাড়তি কোনো চাঁদা না নিয়ে সরাসরি রশিদ জালিয়াতি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কবি নজরুল কলেজের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার জানা মতে, ডিগ্রির ৭৭ জন ও প্রিভিয়াস মাস্টার্সের ৩৯ জনের টাকা ছাত্রলীগ নেতারা ব্যাংকে জমা না দিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের রশিদ দিয়েছেন। এখানে চাইলেও প্রশাসনের কিছু করার ছিলো না। ’
এ বিষয়ে কলেজের ইংরেজি বিভাগে প্রিভিয়াস মাস্টার্সে ভর্তি হওয়া তাসলিমা আক্তার বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন,‘আমি মোট ৫ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু কয়েকদিন যাবৎ বিভাগ থেকে স্যার ফোন দিয়ে বলছেন পুনরায় টাকা জমা দিতে। আমি কেন টাকা জমা দেবো? আমি একবার টাকা জমা দিয়েছি, আর দিতে পারবো না। তাদের মদতে বা তাদের অক্ষমতায় যে জালিয়াতি হয় সেই টাকা আমি কেন দেবো?’
‘প্রয়োজনে হাইকোর্টে রিট করবো, তবু পুনরায় কোনো টাকা জমা দেবো না। ’ বলেও সাফ জানিয়ে দেন এই শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থনীতি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভর্তির সময় আমরা নিজের হাতে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে পারি না। ব্যাংকের মধ্যে ছাত্রলীগের নেতারা তাদের কর্মী বসিয়ে রাখেন। তারাই রশিদ দেন, আবার তারাই টাকা নেন। তাদের কাছ থেকে ব্যাংকের সিল ও স্বাক্ষরসহ টাকার রশিদ নিয়ে সেটা পূরণ করে জমা দিয়ে আমরা ভর্তি হয়েছি। এই অবস্থায় রশিদ জালিয়াতি হয়েছে কিনা সেটা আমরা কেন দেখবো? প্রশাসন যাদের বসিয়ে রশিদ নিয়েছে, তাদের কাছ থেকে টাকা নেবে, আমি পুনরায় কোনো টাকা দেবো না। ’
এ ঘটনায় এরইমধ্যে হইচই পড়ে গেছে কলেজে। ঘটনাটি তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ বিষয় জানতে চাইলে কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও তদন্ত কমিটির সদস্য বদউল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত রিপোর্ট এখনও জমা দেইনি। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছি। রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগে কিছু বলা যাবে না। ’
এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুক্তি রানি সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই সমস্যা এত জনের হয়নি। যাদের হয়েছে তাদের মধ্যে আপনার পরিচিত কেউ থাকলে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন, সমাধান করে দেবো। ’
তদন্ত কমিটির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি হয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে আমি এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না। ’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘কলেজ চালায় প্রশাসন, তারাই ব্যাংকের মাধ্যমে যাবতীয় টাকা জমা নেয়। তাহলে এখানে ছাত্রলীগ কীভাবে জালিয়াতি করবে? আমরা কলেজের একটি সংগঠন মাত্র, কলেজ চালানো আমাদের কাজ নয়। ’
তিনি উল্টো অভিযোগ করেন, এই জালিয়াতিতে প্রশাসনেরই কেউ না কেউ জড়িত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৭
ডিআর/টিআই/এইচএ/