শনিবার (০৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে নিজের গল্পের পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েটদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য শোনান।
একই অনুষ্ঠানে অমিত চাকমাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের মতো মেধাবান না হলেও মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করেছি, উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেছি। আমার অনেক মেধাবী এবং টপ অর্ডার সহপাঠীরাও তাই করেছেন। কিন্তু সবার কর্মজীবনের সফলতা এক হয়নি। জীবনে সফল হতে হলে তিনটি বিষয় কাজ করে, প্রথমত যোগ্যতা দ্বিতীয় কর্মনিষ্ঠা এবং তৃতীয় ক্যারেক্টার। যারা নেতৃত্বে পদ অলঙ্কিত করেন তাদের সবার মধ্যে যোগ্যতা এবং কর্মনিষ্ঠা সবারই থাকে। লোক বিশেষে এই দুটোর ব্যবধান কারো কম কারো একটু বেশি। ক্যারেক্টার এমন একটি বিশেষ গুণ ব্যক্তি হিসেবে তার অনেক ব্যবধান থাকে। আর এই ক্যারেক্টারের মাধ্যমে আপনারা আপনাদের স্বক্রিয়তা গুণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। ক্যারেক্টারের উপর আপনাদের সচেতন হতে হবে’।
পার্বত্য চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া অমিত চাকমার বাংলাভাষার প্রতি কতোটা টান বুঝা যায় বক্তব্যের শুরুতে। তিনি বলেন, ছোটকাল থেকে বাংলা ভাষা শিখেছি। দীর্ঘ ৪৮ বছর দেশের বাইরে থাকার কারণে বাংলার দক্ষতা হ্রাস পেয়েছ। মাতৃভাষা ও স্বাধিকার আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বাংলায় বক্তব্য রাখার আবেগ ধরে রাখতে পারছি না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি লাভ করতে আপনাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। যদিও আমাকে পরিশ্রম ছাড়াই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়ার মাধ্যমে আপনাদের সহপাঠী হতে পেরে আমি গর্বিত। আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়নি, কিন্তু আমার কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার পারিবারিক ও একাডেমিক সম্পর্ক রয়েছে। রয়েছে আবেগের সম্পর্ক। এটি আমার জন্মভূমির শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। আমি অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আবেগাপ্লুত। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ও সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান।
গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা সকলে মেধাবী বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করতে পেয়েছেন। আর এই ডিগ্রি আর মেধা কিভাবে কাজে লাগে তার উপর নির্ভর করবে আপনাদের সফলতা। আপনাদের মেধাকে ভালো কাজে লাগাতে হবে। আপনাদের মতো মেধাবান যুবক-যুবতীর প্রয়োজন শুধু বাংলাদেশেরই নয় সারাবিশ্বের। যুগ যুগ ধরে মানবজাতি যেমন অনেক অগ্রগতির দিকে যাচ্ছে, তেমনি অনেক সমস্যার উৎপত্তি হয়েছে।
অতীতে যেমন মানবজাতি তাদের মেধা কাজে লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করেছে, তেমনি বর্তমানে আপনাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে হবে। এর জন্য জ্ঞানের পরিধি বাড়তে হবে। মনে রাখবেন এই ডিগ্রি আপনাদের শিক্ষাযাত্রার সমাপ্তি নয়। এটা এক বিশেষ মাইলফলক মাত্র।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৭
এসকেবি/বিএস