যা-ও বা আছে তা-ও বেহাল অবস্থায়। নিয়মিত পরিষ্কার না করার ফলে উৎকট দুর্গন্ধে এগুলো ব্যবহার করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিয়মিত পরিষ্কার না করায় শৌচাগারের আশেপাশে গেলেই দুর্গন্ধে বমি আসে। টয়লেটের ভেতরে নেই কোনো আলোর ব্যবস্থা, অধিকাংশ শৌচাগারের দরজা পর্যন্ত নেই। কিছুর আবার দরজা থাকলেও খিল নেই। ক্ষেত্রবিশেষে খিলের কাজ চলে নষ্ট কলমের সাহায্যে। কেউ নিতান্ত বাধ্য না হলে প্রবেশ করেন না। বিভিন্ন ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে একাধিক বিভাগ থাকলেও বেশ কিছু বিভাগের ছাত্রীদের জন্য নেই কোনো শৌচাগার। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের।
এদিকে নতুন বিস্ময় হিসেবে শুরু হয়েছে শিক্ষকদের টয়লেট দখল! বিভিন্ন ভবন ঘুরে দেখা যায় একাধিক বিভাগের চেয়ারম্যানরা শিক্ষার্থীদের টয়লেট বন্ধ করে সেখানে তৈরি করছেন শিক্ষকদের বসার স্থান আর ক্লাবঘর।
ভাষাশহীদ রফিকভবনে বাংলাবিভাগের একটি টয়লেট বন্ধ করে শিক্ষকরা নিজেদের বসার চেম্বার তৈরি করেছেন। নিজ বিভাগের টয়লেট দখলের পর বাংলাবিভাগ চেয়েছিল চারতলায় ইসলামিক স্টাডিজ ও বাংলা বিভাগের মেয়েদের টয়লেট দখল করে শিক্ষকদের জন্য রুম বানাতে। কিন্তু ইসলামিক স্টাডিজ তাতে রাজি না হওয়ায় তা আর করতে পারেনি তারা । কিন্তু এরপর থেকেই চার তলার এই টয়লেটে ঝুলছে তালা। এ ভবনের নিচতলার আরেকটি টয়লেট বোটানি ও গণিত বিভাগ বেঞ্চ ফেলে বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে, বিজ্ঞান অনুষদের মনোবিজ্ঞান-বোটানি-ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগে যে চারটি টয়লেট রয়েছে, তার সবগুলোতেই তৈরি হচ্ছে বিভাগীয় চেম্বার ও ক্লাব। ফলে এই তিন বিভগের শিক্ষার্থীদের জন্য একমাত্র রসায়ন বিভাগের একটি মাত্র ছোট টয়লেটই ভরসা। এছাড়া গণিত বিভাগের নেই কোনো টয়লেট। বিভাগটির সেমিনারকক্ষে যে টয়লেটটি আছে, যথাযথ সংস্কারের অভাবে সেটিও বন্ধ রয়েছে। এই অকেজো টয়লেটের উৎকট দুর্গন্ধে সেমিনারটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগই সর্বপ্রথম টয়লেট দখলের কাজটি শুরু করে। এরপর বোটানি বিভাগের টয়লেট দখল যা পরে ভুগোল বিভাগের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।
এদিকে মনোবিজ্ঞান বিভাগের একটি মাত্র টয়লেট দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় সেখানে ঐ বিভাগের একজন কর্মচারী অতিকষ্টে রাত্রিযাপন করেন।
পরিসংখ্যান বিভাগে একটিমাত্র টয়লেট থাকলেও সেটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এসব কারণে এই অনুষদের প্রায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নতুন একাডেমিক ভবনের টয়লেটগুলোতে যাতায়াত করেন।
এর আগে সেন্ট্রাল ক্যান্টিনের পাশে একটি টয়লেট বন্ধ করে সেখানে বানানো হয়েছে নিরাপত্তা দপ্তর। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান ফটকের পাশের দুটি টয়লেট দখল করে বানানো হয়েছে কর্মচারী সমিতির কার্যালয়।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, কলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগেও বেহাল টয়লেটগুলেঅ ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিটি বিভাগে শিক্ষকদের ব্যবহারের জন্য বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কক্ষের পাশে একটি করে টয়লেট রয়েছে। অথচ শিক্ষার্থীদের টয়লেট-সমস্যা নিয়ে শিক্ষকদের বা প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই। উল্টো শিক্ষার্থীদের টয়লেট দখল করে শিক্ষকরা তাদের বসার স্থান তৈরি করছেন। এমন ঘটনায় শিক্ষার্থীদের কতোটা খারাপ লাগে তা হয়তো তারা জানেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বাংলানিউজের কাছে স্বীকার করেন, ‘পরীক্ষা চলাকালীন এই সমস্যাটা অনেক বেশী প্রকট আকার ধারণ করে। শিক্ষার্থীরা এক বিল্ডিং এ পরীক্ষা দেয় কিন্তু তাদের টয়লেটের প্রয়োজনে যেতে হয় অন্য বিল্ডিং এর টয়লেটে। এতে একদিকে সময় নষ্ট হয়, অন্য দিকে নষ্ট হয় পরীক্ষার পরিবেশ। ’
এদিকে টয়লেট দখল প্রসঙ্গে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমিও চাই টয়লেট গুলো শিক্ষার্থীদের জন্য সচল থাকুক। তবে কেউ যখন এগুলো দখল করে আর সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো পদক্ষেপ না নেয় তখন আমরাও অকেজো হয়ে পড়ে থাকতে দেখে ব্যবহার করার জন্য একটা পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রয়োজনে এসব দখল-বেদখল কিছু না। ’
বোটানি বিভাগের টয়লেট বন্ধ করে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাসনা হেনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘টয়লেট দখলের বিষয়টা এমন না। আসলে কারো যদি 'ইমারজেন্সি' প্রয়োজন হয় আমাদের কাছে আসলে আমরা চাবি দিয়ে দেব অথবা প্রয়োজনে একজন পিয়ন সাথে গেল। টয়লেট থাকার কারণে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের অনেক সমস্যা হয়। পাশে থেকে টয়লেটের গন্ধ আসে । তাই তালা লাগিয়ে রেখেছি। প্রয়োজনে খুলে দেব। ’
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টয়লেট দখল করে ক্লাব বা চেম্বার তৈরির ব্যাপারে কিছুই জানেন না প্রকৌশল ও রেজিস্ট্রার দপ্তর। এ প্রসঙ্গে জবির প্রধান প্রকৌশলী সুকুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাকে এসব বিষয়ে কেউ জানায় নি। তবে একজন শিক্ষক অভিযোগ দিয়েছিলেন। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যানিটেশন সমস্যা ও টয়লেট বন্ধ করে দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিভাগের কোনো কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগের। আর দখলের বিষয়ে আমি অবগত নই। আমাদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ বা চিঠি তো আসেনি। আপনি বরং ঐ বিভাগের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা বলতে পারবেন কেন এই দখল-বেদখল। ’
টয়লেট দখল বেদখল ও ব্যাবহারের অনুপযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেব। আশা করি দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধান হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৭
জেএম/