ঢাকা, সোমবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ সফর ১৪৪৬

শিক্ষা

জাবির বিজ্ঞান কারখানায় দেড় বছর ধরে তালা

নুর আলম হিমেল, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৭
জাবির বিজ্ঞান কারখানায় দেড় বছর ধরে তালা জাবির বিজ্ঞান কারখানা ছবি: বাংলানিউজ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: দেড় বছর ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিজ্ঞান কারখানায় তালা ঝুলছে। আর চোরেরাও বসে নেই। চুরি ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার যন্ত্রাংশ।

এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ এর বিজ্ঞান কারখানার কোনো কার্যক্রম নেই।

এজন্য ক্ষতি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ বিষয়ে দৃশ্যত কোনো নজর, কোনো মাথাব্যথা নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

এখানেই শেষ নয়, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আছে অথচ ব্যবহার করতে দিচ্ছেন না বলে বিজ্ঞান কারখানার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক রবীন্দ্রচন্দ্র সিংহের বিরুদ্ধে অভিযোগের তর্জনী উঠেছে।

বিজ্ঞান কারখানা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কারখানাটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। দাপ্তরিক কাজ ছাড়া কোনো কাজই হচ্ছে না এখানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল সকল ধরনের কাজ করা হতো এখানে। এর সুবিধা পেতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু টানা দেড় বছর ধরে সকল কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
জাবির বিজ্ঞান কারখানা ছবি: বাংলানিউজ
অফিসসূত্রে আরো জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রের পিছনে বিজ্ঞান কারখানার পুরনো ভবন ছিল। ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে ফাটল ধরায় সিলগালা করে দেওয়া হয়। একারণে অস্থায়ীভাবে ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রের নিচতলায় বিজ্ঞান কারখানার অফিস করা হচ্ছে।

কিন্তু প্রয়োজনীয় ছোট ছোট যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ পুরনো ভবনে রেখেই তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তদারকি ও দেখভাল না করার কারণে জানালা ও গ্রিল ভেঙ্গে অন্তত তিনবার প্রায় কয়েক লক্ষ টাকার যন্ত্রাংশ চুরি গেছে।

আর ভারি যন্ত্রাংশগুলো মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে নতুন বিজ্ঞানভবনে রাখা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর ব্যবহার না করার কারণে লক্ষ লক্ষ টাকার এসব যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ জং ধরে নষ্ট হতে বসেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান অস্থায়ী অফিসে আমাদের কোনো যন্ত্রাংশই রাখা হয়নি। বিজ্ঞান কারখানার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক রবীন্দ্রচন্দ্র সিংহ পুরনো ভবনটিতে তালা মেরে রেখেছেন। তার পারমিশন ছাড়া কোনো যন্ত্র আনতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই কোনো কাজই করা যাচ্ছে না।
জাবির বিজ্ঞান কারখানা ছবি: বাংলানিউজ
বিজ্ঞান কারখানার জন্য তিনটি কম্পিউটার রয়েছে। দুটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। প্রিন্টার আছে কালি নেই। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষককে অধ্যাপক রবীন্দ্রচন্দ্র সিংহকে একাধিকবার বলে ও অনুরোধ করেও কোনো কাজ হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা বিজ্ঞান কারখানার প্রয়োজনীয় টুলস্ ক্রয় বাবদ দেওয়া হয়। কিন্তু এই দেড় বছরে কোন টুলস্ ক্রয় করা হয়নি।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, টুলস ক্রয় বাবদ এই টাকা দিয়ে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক নতুন বিজ্ঞান কারখানার সামনে ফুলের বাগান তৈরি করছেন।
জাবির বিজ্ঞান কারখানা ছবি: বাংলানিউজ
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বিজ্ঞান কারখানায় কোনো কাজ করতে দিলে সঠিক সময়ে করে দেয়া হয় না। এমনকি ছোট একটি কাজ করতেও কয়েক মাস লাগিয়ে দো হয়। একারণে বিরক্ত হয়ে অন্য জায়গা থেকে জিনিসগুলো সারাতে হয়। ছোট একটি কাজের জন্য যদি বাইরে যেতে হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান কারখানা থাকার দরকারই বা কি!
 
এ বিষয়ে বিজ্ঞান কারখানার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক রবীন্দ্রচন্দ্র সিংহ বলেন, পুরনো ভবন যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। তাই সেটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। নতুন ভবনে এখনো পর্যন্ত বিদ্যুৎসংযোগ দিতে পারেনি প্রশাসন। তাই নতুন ভবনে এখনো কাজ শুরু করতে পারিনি।

‘লক্ষ লক্ষ টাকার যন্ত্রাংশ যে, চুরি ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এ দায়ভার কে নেবে? --এ-প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করেছি। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি আজো।
জাবির বিজ্ঞান কারখানা ছবি: বাংলানিউজ
‘প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ না কিনে বাগান তৈরি করছেন’ মর্মে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়া হয় না বলেই এটাকা দিয়ে বাগান করা হচ্ছে। পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, কর্মকর্তারা যন্ত্রাংশ ব্যবহারের সঠিক তথ্য দিতে পারেন না।   এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয় রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা তাদেরকে বলেছি দ্রুত নতুন বিজ্ঞান কারখানায় শিফট করার জন্য।

তাকে যখন বলা হয়, এখনো বিদ্যুৎ সংযোগই দেওয়া হয়নি, তখন তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে তারা যেভাবে চাচ্ছে  সেভাবে মনে হয় হয়নি। তবে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।