ঢাকা, সোমবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ সফর ১৪৪৬

শিক্ষা

গৌরব-সম্মানের ৯৬ বছর পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫১ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৭
গৌরব-সম্মানের ৯৬ বছর পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) দেখতে দেখতে পার করেছে ৯৬ বছর। শনিবার (০১ জুলাই) ৯৭ বছরের পদার্পণ করবে।

ব্রিটিশ শাসনামলে পিছিয়ে পড়া পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের দাবির প্রেক্ষিতে বঙ্গবঙ্গ রদের পর ১৯২১ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠা করা হয় উচ্চ শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠান। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হাউজ টিউটর’ পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের অনুকরণে প্রণয়ন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম।

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ.সি, টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, জি.এইচ ল্যংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, স্যার এ এফ রহমান, পিজে হার্টগ, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, রমেশচন্দ্র মজুমদার, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাকসহ খ্যাতিমান শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় উচ্চ শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি অল্প দিনে পরিচিতি পায় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে। একাডেমিক বিষয়ের পাশাপাশি দেশের ক্রান্তিকালেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে দেশসেরা এই বিদ্যাপীঠ। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয়দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১ এর দেশ ভাগ, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ২০০৭ এর ১/১১ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। সফলও হয়েছিল।

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করা হবে। গবেষণায় সীমিত বাজেটের মধ্য দিয়েও এই বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সম্প্রতি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু দ্বীপ নিয়ে গবেষণা করে সফলতা অর্জন করে। তাই এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে সেই বিষয়ে গুরুত্ব রেখে প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘উদ্ভাবন ও উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে কর্তৃপক্ষ শনিবার (০১ জুলাই) দিনব্যাপি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল সোয়া ১০টায় প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন মলে জাতীয় পতাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসগুলোতে পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, কেক কাটা এবং উদ্বোধনী সংগীতের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন।

অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার আয়োজিত দুর্লভ পাণ্ডুলিপি প্রদর্শন। এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন হল থেকে শোভাযাত্রাসহ প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন মলে জমায়েত হবে। তারপর সেখান থেকে শোভাযাত্রা সহকারে টিএসসিতে প্রবেশ করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হল দিনব্যাপি নিজস্ব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে হল, বিভাগ ও অন্যান্য অফিস বেলা ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন। তিনি এতে উল্লেখ করেন, ০১ জুলাই ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে খ্যাত দেশের ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৯৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করছে। বুদ্ধিবৃত্তিক ও উচ্চশিক্ষিত মানবসম্পদ উন্নয়ন শুধু নয়, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় বাংলাদেশের জাতি গঠনমূলক আন্দোলন-সংগ্রামে পৃষ্ঠপোষকতা ও নেতৃত্বের অংশীদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা, গবেষণা, সাহিত্য, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কর্মকাণ্ডের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জাতীয়ভাবে রয়েছে প্রশংসনীয় অবদান।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১ সালে শতবর্ষে পদার্পণ করবে। একইসাথে বাংলাদেশ সরকার রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই লক্ষ্যে একান্তভাবে শিক্ষা, গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সেই লক্ষ্যেই আজকে আমাদের প্রতিপাদ্য ‘উদ্ভাবন ও উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’। এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে জাতির পিতার কাক্সিক্ষত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা।

প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদ রয়েছে ১৩টি, বিভাগ ৮৩টি, ইনস্টিটিউট ১২টি, আবাসিক হল ২০টি, হোস্টেল ৩টি, শিক্ষক এক হাজার ৯শ’ ৯২ জন, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ১৮ জন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, ৩০ জুন, ২০১৭
এসকেবি/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।