বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খুলনা জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
খুলনা জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
খুলনা জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক ওয়ালিউল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইটিসি) গিয়াস উদ্দিন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এস এম হাবিবসহ জেলা প্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকরা।
বিভাগীয় কমিশনার তার বক্তব্যে স্বপ্নের প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে আড়পাড়া মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অনুকরণের আহ্বান জানান সবার প্রতি।
প্রধান অতিথি বলেন, একটি স্বপ্নের স্কুল কেমন হতে পারে তার উদাহরণ মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে প্রতিনিয়ত উদ্ভাবনী উদ্যোগের প্রয়োগ ও চর্চা চলছে। শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল আইডি কার্ড মেশিনে ছুঁয়ে দিয়ে স্কুলে প্রবেশ করে। স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকতেই অভিভাবকদের জন্য আনন্দ পাঠাগার। শিশুদের জন্য অপেক্ষাকালে মায়েরা শিশু বিষয়ক গল্পের বইসহ বিভিন্ন বই পড়েন। বাড়িতে গিয়ে মায়েরা সে গল্প সন্তানদের শোনান।
তিনি বলেন, খুলনা বিভাগের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এভাবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুরা তাদের জীবনের ভিত গড়ে। আর সে বিদ্যালয় যদি হয় সুন্দর, পরিপাটি, সাজানো-গোছানো, তাহলে ছোটবেলা থেকেই শিশুরাও সাজানো-গোছানো জীবনে অভ্যস্ত হবে।
শিশুকাল থেকে নৈতিকতা চর্চার অনুকরণীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আড়পাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সুনাম অর্জন করেছে জানিয়ে তাদের মতো খুলনার সব বিদ্যালয়য়ে এ পদ্ধতি চালু করার আহবান জানান জেলা প্রশাসক।
মতবিনিময় সভার শুরুতে আড়পাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এটি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইয়াসমিন আক্তার তার প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তনের গল্প তুলে ধরেন।
ইয়াসমিন আক্তার জানান, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা দিতে হয়। আইডি কার্ডটি মেশিনের সামনে ধরলেই হলো। অভিভাবকের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে ক্ষুদে বার্তা, জানিয়ে দেবে আপনার শিশু বিদ্যালয়ে এসে গেছে।
তিনি আরও জানান, স্কুলের তথ্য বোর্ডে প্রতিদিন ঝোলানো থাকে এই দিনে কি ঘটেছিল, কোন মনীষীর জন্ম হয়েছিল। অ্যাসেম্বলিতে সবার সামনে যে সবচেয়ে নির্ভুলভাবে তথ্য বোর্ডের তথ্য বলতে পারবে সে ম্যান অব দ্য ডে’র আদলে পায় ‘আজকের শিশু কার্ড’টি। দু-তিন সারি হুক লাগানো দেয়ালে ঝোলানো থাকে কিছু পুরোনো কাপড়-চোপড়। যাদের প্রয়োজন নেই তারা রেখে যায় এগুলো। আর যাদের প্রয়োজন তারা সেগুলো নিয়ে যায়। প্রায় সব স্কুলের অ্যাসেম্বলিতে শিক্ষার্থীরা শপথ পাঠ করে। কিন্তু এই স্কুলের শিক্ষকরাও হাত তুলে শপথ পাঠ করেন। প্রতিদিন একেকজন শিক্ষক পর্যায়ক্রমে এই শপথ পাঠ করেন। স্কুলে আছে একটি অনেস্টি শপ (সততা দোকান), যেখানে সাজানো আছে খাবার আর স্টেশনারি দ্রব্য, কিন্তু কোনো বিক্রেতা নেই। শিক্ষার্থীরা যার যেটা প্রয়োজন, নিয়ে যাচ্ছে। আর স্বচ্ছ ক্যাশ বাক্সে জিনিসের দাম রেখে আসছে।
ইয়াসমিন আক্তার কৃতজ্ঞ স্বরে জানান, তার এসব উদ্যোগে সবাই সহযোগিতা করেছেন।
সভায় অংশগ্রহণকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকসহ অনেকেই আড়পাড়া মডেল বিদ্যালয়ের মতো বিদ্যালয় গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৭
এমআরএম/এইচএ/