কোচিং বাণিজ্যের কাছে তারা জিম্মি হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, অধিকাংশ শিক্ষক ক্লাসের চেয়ে প্রাইভেট কিংবা কোচিং সেন্টারে বেশি সময় ব্যয় দিচ্ছেন।
বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছে, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে না পড়লে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাই না। বাইরে এক শিক্ষকের কাছে পড়লে তিনি সব বই পড়ান, কিন্তু বিদ্যালয়ে শুধু একটি বিষয়ের ওপর পড়ান। ফলে বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে আমাদের যেতে যেতে পথেই অনেক সময় কেটে যায়। আমাদের ইচ্ছামতো কোনো শিক্ষকের কাছে পড়তে পারি না’।
বরগুনা জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সকলকেই যেতে হয় শিক্ষকদের কাছে। না হলে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেন।
অভিভাবক আ. আউয়াল (ছদ্মনাম) অভিযোগ করেন, ‘আমার মেয়েকে আমি কোথায় পড়াবো, তা নির্ধারণ করে দেন বিদ্যালয়ের শ্রেণি শিক্ষক। মেয়েকে তার কাছে পড়তে না দিলে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেন তিনি’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য একজন অভিভাবক বলেন, ‘প্রথমে আমি আমার মেয়েকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে পড়তে দেইনি। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় দেখি, মেয়ে দুই বিষয়ে ফেল করেছে। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে পড়াইনি বলে তার এ অবস্থা। পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে পড়তে পাঠালে সে পাস করে। কিন্তু বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় পাস করলেও বোর্ডের পরীক্ষায় ফেল করতে পারে’।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধে শাস্তির বিধান রেখে ২০১২ সালে নীতিমালা জারি করে। নীতিমালা অনুসারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষক স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট কিংবা কোচিং করাতে পারবেন না। তবে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে শুধু অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বিষয়ের জন্য সরকার নির্ধারিত টাকা রশিদের মাধ্যমে নেওয়া যাবে।
তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আহমেদ বলেন, সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
বরগুনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদ্যালয় দু’টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বরগুনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. নুরুজ্জামান বলেন, কোচিং বাণিজ্য নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক কথা হয়েছে। শিগগিরই শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কোচিং বাণিজ্য বন্ধে বিধিমালা অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিগগিরই দৃশ্যমান কার্যক্রম দেখতে পাবেন’।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭
এএসআর