ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ফের ইবি’র নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ক্লিপ ফাঁস

ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
ফের ইবি’র নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ক্লিপ ফাঁস

ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নিয়োগ বাণিজ্যের আরো একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। তাতে এবার  মূল ‘হোতা’ হিসেবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের নাম উঠে এসেছে।

অভিযোগ উঠেছে, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিন নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থী খোঁজার দায়িত্বে থাকতেন এবং প্রক্টর মাহবুবর রহমান সু-কৌশলে বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়োগ সম্পন্ন করতেন।

এ ফাঁসকৃত অডিওতে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নিয়োগ নিয়ে ওই বিভাগের তৎকালীন সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক রুহুল আমিনের সঙ্গে কথা হয়েছে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের।


 
ফোনালাপে নিয়োগ বোর্ড শেষে হালিম নামে এক প্রার্থীকে ধরার নির্দেশ দেন তিনি। এসময় ব্রেন ওয়াশ না করলে সর্বানশ হয়ে যাবে বলেও সতর্ক করা হয় রুহুল আমিনকে।  

এর আগে ২ এপ্রিল ফাঁস হওয়া অডিওতে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তৎকালীন সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক রুহুল আমিন তার বন্ধু এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক আবদুল হাকিমকে নিয়োগ প্রত্যাশি খুঁজতে নির্দেশ দেন।

ফাঁস হওয়া কথোপকথনে নিয়োগ প্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে যাদের (এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টার্স) তিনটাতে ফার্স্ট ক্লাস আছে তাদের ১৫ লাখ টাকা এবং যাদের চারটিতেই ফার্স্ট ক্লাস তাদের ১২ লাখ টাকার বিষয়টিও উঠে আসে।

রেজিস্ট্রার ও বিভাগীয় অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ সংক্রান্ত প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে তিনটি পদের বিপরীতে মোট ৩৮ জন প্রার্থী নিয়োগ বোর্ডে অংশ নেন।

মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান আবেদনকারীদের ডেকে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এসময় নিয়োগ প্রত্যাশী হালিমকে ব্রেন ওয়াশ না করলে কিন্তু সর্বনাশ হয়ে যাবে বলে সহযোগী অধ্যাপক রুহুল আমিনকে বলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের এ রহস্যপূর্ণ কথোপকথন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমানের সঙ্গে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তৎকালীন সভাপতি সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিনের সঙ্গে নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে কথা বলেন। কথোপকথনটি হুবহু পাঠাকের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো।

রুহুল আমিন : হ্যালো
মাহবুব : তোমার মোবাইল বন্ধ? ধরতে ছো না যে মোবাইল?
রুহুল: মোবাইল ভুলে অফিসে রেখে আসছি স্যার, বলেন স্যার
মাহবুব: মোবাইল অফিসে রাখলে তো মুশকিল! আমি কিন্তু তোমাকে চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি ও (হালিম) চালাকি করতেছে।
রুহুল: কেন স্যার?
মাহবুব: ও চালাকি করতেছে তুমি যদি এখন আমার সঙ্গে (তুমিসহ) দেখা করতে না আসো ওর যদি ব্রেন ওয়াশ করে না দেই তাহলে কিন্তু সর্বনাশ হয়ে যাবে। ও মানে চালাকি করতেছে মানে কী? হানন্ড্রেড পারসেন্ট চালাকি করছে এবং পালানোর চেষ্টা করছে। সব কিছু ‘ওর’ (হালিম) জানা হয়ে গেছে। এখন পালানোর চেষ্টা করছে। আমি তোমাকে বললাম, আমার জাস্ট অভিজ্ঞতা দিয়ে বললাম তুমি কাজটা করো। কিছুই না ওকে নিয়ে আসো ব্রেন ওয়াশ করি তার পরে সে যাক। হালিম বলেছে, স্যার খুব ভাল ভাইভা দিয়েছি স্যার, খুব ভাল হয়েছে স্যার, একদম স্যার সব উত্তর দিয়েছি, স্যার কী খবর হয় না হয় স্যার, বাসায় গিয়ে শুনি স্যার। ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে বাড়ি চলে যাই স্যার, বাসায় গিয়ে শুনি স্যার। তার প্রতিটি কথার মধ্যে আমার সন্দেহ হয়।
রুহুল: না না স্যার, আপনি টেনশন করেন না স্যার।
মাহবুব: তুমি কী তাকে আনতে চাচ্ছো না ?
রুহুল : স্যার আমি দেখছি স্যার, আমি ফোন দিচ্ছি স্যার, কোথায় আছে?
মাহবুব: এখন চলে যাবে। তিনটি ক্যান্ডিডেটের সঙ্গে যদি একটু কথা বলা যেত সব চেয়ে ভালো হতো।
রুহুল : দেখি আমি কথা বলছি স্যার।
মাহবুব: দেখতো একটু।     

আরো জানা যায়, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান ফিন বিভাগটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নিজের আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন। বিভাগের সভাপতি শিক্ষক নিয়োগসহ সব বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ করে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান।

অভিযোগ পাওয়া যায়, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আলাউদ্দিনের সঙ্গে লবিং করে ২০১৪ সালে মো. আবদুল হালিম, সঞ্জয় কুমার সরকার এবং বখতিয়ার হাসানকে শিক্ষক নিয়োগ দেন।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন,“ যে কখোপকথন আমি শুনেছি তা সম্পুর্ণরূপে রাজনৈতিক মতাদর্শগত ও গ্রুপ মোটিভেশন প্রক্রিয়া। কারণ, উল্লেখিত সময়ে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ দুইভাগে বিভক্ত ছিল। ”

উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বাংলানিউজকে বলেন ‘অডিও ক্লিপটি শুনে যদি সন্দেহ হয় তাহলে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করব। তদন্ত প্রতিবেদনে বিষয়টি প্রমাণিত হলে প্রক্টরকে কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।