ঢাকা, বুধবার, ২০ ভাদ্র ১৪৩১, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দু’দিনে অনুপস্থিত ১ লাখ ২২ হাজার, ঝরে পড়া নিয়ে উদ্বেগ

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৭
দু’দিনে অনুপস্থিত ১ লাখ ২২ হাজার, ঝরে পড়া নিয়ে উদ্বেগ ফাইল ফটো

ঢাকা: ঝরে পড়া রোধে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিলেও প্রতিবছর অষ্টম শ্রেণি পার করতে পারছে না লাখ লাখ শিক্ষার্থী। অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করলেও এসব শিক্ষার্থীর কয়েক লাখ ঝরে যায় প্রতিবছর। চলতি বছরে প্রথম দুই পরীক্ষায় অনুপস্থিত প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার, যা উদ্বেগের।

বিনামূল্যে বই ও পড়াশোনার খরচ সরকার বহন করলেও ঝরে পড়ার কারণ অনুসন্ধান নিয়ে আদতে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। আর এই ঝরে পড়াকে উদ্বেগজনক হিসেবেই দেখছেন শিক্ষাবিদরা।


 
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড বলছে, ঝরে পড়া রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের জন্য একটি লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হবে।
 
চলতি বছরের অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার প্রথম দিন আটটি সাধারণ ও মাদরাসা বোর্ডে অনুপস্থিত ছিল ৬০ হাজার ৮৯৩ জন। দ্বিতীয় দিন এই সংখ্যা ৬১ হাজার ৯৮৯ জনে গিয়ে দাঁড়ায়। মাত্র দু’দিনেই অনুপিস্থিতির সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার।
 
প্রথম দিন জেএসসিতে বাংলা প্রথমপত্র ও জেডিসিতে কুরআন মাজিদ ও তাজবিদ এবং দ্বিতীয় দিন জেএসসিতে বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং জেডিসিতে আকাইদ ও ফিকহ বিষয়ের পরীক্ষা হয়।
বিগত বছরগুলোতেও দেখা যায় প্রথম দিনেই পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল অর্ধলাখ। তবে পরীক্ষার্থী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে অনুপস্থিতির হারও।
 
২০১৩ সালে প্রথম দিন জেএসসি-জেডিসিতে অনুপস্থিত ছিল ৫৯ হাজার ৫১৭ জন, ২০১৪ প্রথম দিন অনুপস্থিত ছিল ৪৬ হাজার, ২০১৫ সালে প্রথম দিন অনুপস্থিত ৪১ হাজার ৮০৯ জন এবং ২০১৬ সালে ৫৯ হাজার ৬৬১ জন পরীক্ষার্থী।
 
অষ্টমে ঝরে পড়ার কারণ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো গবেষণা নেই বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহাবুবুর রহমান।
 
এবার জেএসসি-জেডিসির প্রথম দিনের থেকে দ্বিতীয় দিনে বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।
 
কেন এতো ঝরে যাচ্ছে- সেই প্রশ্ন রেখে ড. মাহাবুবুর রহমান বলেন, এসএসসির মতো জেএসসি-জেডিসিতে টেস্ট পরীক্ষা বা বাছাই পদ্ধতি নেই। যারা রেজিস্ট্রেশন করে সবাই পরীক্ষার যোগ্য হয়। তবে তার ধারণা, শিশুশ্রম ও বাল্য বিয়েই ঝরে পড়ার মূল কারণ হতে পারে। গ্রামাঞ্চলে সপ্তম-অষ্টম শ্রেণিতে ১৮ বছর বয়স দেখিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়। আর ৫ম-৮ম শ্রেণির মধ্যে ঢুকে যায় শিশুশ্রমে।
 
গ্রামের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, দু’জন বা গ্রুপ ধরে স্কুলে গেলে ঝরে পড়ে না। তবে একজনের বিয়ে হয়ে গেলে গ্রামে আর অন্যজন স্কুলে যেতে চায় না। কারণ বয়সের হিসাবে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত নিরাপদ থাকে।
 
তিনি বলেন, জেএসসির এসব শিক্ষার্থী এসএসসি পর্যন্ত ৫-১০ লাখ ঝরে যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ঝরে পড়া নিয়ে গবেষণা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বিয়ে এবং শিশুশ্রমই মূল কারণ।
 
এবারের জেএসসি-জেডিসির শিক্ষার্থীরা ২০১৪ সালে পঞ্চম শেণিতে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী দিয়েছেন, সে সময় নির্বাচনকালীন উত্তপ্ত ছিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
 
সেই কথা স্মরণ করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্ট শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালে রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত ছিল। এবার বন্যা বা প্রকৃতিক দুযোগ একটা কারণ কিনা, দেখতে হবে।
 
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী আরো বলেন, ২০১৪ সালের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনীতে পরীক্ষার্থী ছিল ২৯ লাখ। তারাই কমে গিয়ে ২৪ লাখে দাঁড়িয়েছে। জেএসসি-জেডিসির শুরুতেই হারিয়ে গেছে লাখের বেশি শিক্ষার্থী। মেয়েদের সংখ্যাটাই হয়তো বেশি হবে।
 
পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে সিরিয়াসলি চিন্তা-ভাবনা করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এতো ঝরে যাওয়ায় বোঝাই যাচ্ছে প্রস্ততি ছিল না।
 
ঝরে পড়ার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন এই শিক্ষাবিদ।
 
‘ঝরে পড়াটা ভালো লক্ষণ না। একটা পরীক্ষা দিয়ে ঝরে গেলো। এই পরিস্থিতি চলা উচিত না। এ ঘটনা উদ্বেগের। ’
 
তিনি বলেন, এসব পরীক্ষার্থীর তথ্য যেহেতু সরকারের কাছে রয়েছে, সেহেতু গবেষণাভিত্তিক তালিকা করা উচিত। কেন ঝরে গেলো- গবেষণা করা উচিত।
 
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ঝরে পড়া কমানোর ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের জন্য অনলাইনে একটি নির্দেশনা দেবো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৭
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।