সোমবার (০৬ অক্টোবর) সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্যেরে নেতৃত্বে স্কুল ভবনটিতে গড়ে ওঠা হোসিয়ারি কারখানাটি উচ্ছেদ করা হয়।
মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) থেকে স্কুলটির কার্যক্রম পুরোদমে চালু করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ১০টার দিকে কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুর নির্দেশে ২নং ওয়ার্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে স্থানীয় লোকজন স্কুলটিতে আসেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- মাতুয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শামীম, কুতুবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সেক্রেটারী রাসেল মোল্লা, ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম লিটন, সেক্রেটারী নূরে আলম, গিরিধারা পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি বেলাল হোসেন, সেক্রেটারী ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি হাজী শাহাদাৎ চৌধুরী, সহ-সভাপতি ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য হাজী শানু মিয়া, গিরিধারা যুব ফোরামের সভাপতি শাহ কামাল, শিক্ষক প্রতিনিধি সালেহা বেগম, শিক্ষক বকুল হোসেন প্রমুখ।
ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে স্কুল ভবনটি দখল করে গড়ে ওঠা ৮টি হোসিয়ারি কারখানার মালিককে তাদের মালামাল এক ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নেওয়া নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে স্কুল ভবনটির শ্রেণিকক্ষগুলো দখলমুক্ত করে তালা লাগিয়ে চাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি ও গিরিধারা পঞ্চায়েত কমিটির সেক্রেটারী হাজী শাহাদাত চৌধুরী জানান- স্কুল ভবনের শ্রেণিকক্ষগুলোতে ৮টি হোসিয়ারি কারখানা ভাড়া দিয়েছিলো দখলকারীরা। এছাড়া স্কুলে থাকা ৪টি আলমারি, চেয়ার টেবিল ও বেঞ্চসহ অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে ফেলা হয়েছিলো। সোমবার ওই সকল হোসিয়ারি কারখানা উচ্ছেদ করে আমাদেরকে চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার থেকে স্কুলটি চালু করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
২নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম জানান, যারা স্কুলটির জমি নিজেদের দাবি করে দখলে নিয়েছিলেন তাদেরকে মঙ্গলবারের মধ্যে স্কুলটির মালামাল ফেরত দেওয়ার জন্য বলেছি। আশা করছি আগামী শনিবারের মধ্যে স্কুলটির কার্যক্রম পুরোদমে চালু করতে পারবো।
১৯৯৯ সালের ২৯ আগষ্ট ফতুল্লার ভূইগড় গিরিধারা আবাসিক এলাকায় রমজান আলী চিশতী উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে সাড়ে ৭ শতাংশ জমি দান করে দলিল (নং ৪২৪০) সম্পাদন করেন ওই এলাকার বাসিন্দা সেলিম চৌধুরী। এরপর জনগণের আর্থিক সহযোগিতায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেলিম চৌধুরী ১৪ জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি শিক্ষকদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে সবর্মোট ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
এছাড়ও তিনি স্কুলের জমিটি একই এলাকার আনিছুর রহমান মৃধা, দাদন আকন, আব্দুল আলিম ও আতাউর রহমানের কাছে বিক্রি করে দিলে তাদের নেতৃত্বে ভূমিদস্যুদের একটি চক্র স্কুলটি দখল করে নেয়। তারা স্কুলের অবকাঠামো দখল করে নিয়ে টেবিল বেঞ্চসহ সকল আসবাবপত্র লুটে নেয় এবং স্কুলের সাইনবোর্ড মুছে ফেলে সেখানে ক্রয়সূত্রে মালিক উল্লেখ করে তাদের নামের সাইনবোর্ড সাটিয়ে দেয়।
স্কুলটির ভবন বেদখল হয়ে পড়ায় শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ১২০ জন শিক্ষার্থীর। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা পরিষদের ইউএনও, জেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং চলতে থাকা ভূমিদস্যুদের চোখ রাঙানি ও হুমকি ধমকি।
পরে রোববার (০৫ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্কুলটির পক্ষে বাদি হয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা (সিআর ১২৩/২০১৭) দায়ের করেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি হাজী শাহাদাত চৌধুরী। মামলার আসামিরা হলেন- স্কুলটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেলিম চৌধুরী, স্কুলের জমি দখলে নেওয়া আনিছুর রহমান মৃধা, দাদন আকন, মো. আলীম, আতাউর রহমান, কামাল হোসেন, নাজমুল আলম ও ইউসুফ মিয়া।
বাদিপক্ষের আইনজীবী শাহাদাৎ হোসেন জানান, আদালত মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডিকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৭
বিএস