উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক একর ৭৯ শতাংশ জমিতে প্রতিষ্ঠিত। এর পাশেই মহিষাশ্বহর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, প্রথমে মাঠের দক্ষিণ দিকে দুই একটি দোকান বসানো হয়েছিল শিক্ষার্থীদের জন্য। কিন্তু বাড়তে বাড়তে সেখানে এখন গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক দোকান-বিপণি বিতান। আস্তে আস্তে হাট-বাজারও স্থাপন করে নাম দেওয়া হয়েছে মহিষাশ্বহর হাট ও বাজার।
এখন সপ্তাহে দু’দিন জমজমাট হাট বসে প্রাথমিক বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠসহ প্রায় এক একর জমি জুড়ে। প্রতি সোমবার ও শুক্রবারের ওই হাটে বাঁশ ছাড়াও তামাক, ধান, গম, পাটসহ বিভিন্ন পণ্যের জমজমাট বেচা-কেনা চলে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাট-বাজার হিসেবে স্থায়ী করে নেওয়ার পর অনেকেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে অবৈধ সুযোগে ম্যানেজ করে নির্মাণ করেছেন পাকা দোকানঘরও।
তবে আশেপাশে হাট না থাকায় খেলার মাঠ ছাড়া দোকানঘরের মাধ্যমে দখল হওয়া বিদ্যালয়ের প্রায় এক একর জমি পেরিফেরি ঘোষণা করে হাট-বাজার বসিয়ে রাজস্ব আদায়ের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয়রা। কিন্তু বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব থাকা প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে স্থানীয় ভূমি অফিসে অবৈধ যোগাযোগে তা হয়ে ওঠেনি বলে তাদের অভিযোগ। ফলে স্থানীয় ভূমি অফিস পেরিফেরি না করে দাতব্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে খাজনা আদায় করছে।
প্রতি দুই মাস পর পর হাটটির ইজারাদার নিয়োগে প্রকাশ্যে নিলাম করা হয়। দর ওঠে ২০/২৫ হাজার টাকা। এভাবে বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকা আদায় করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি। চলতি নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের জন্য ২২ হাজার টাকায় নিলাম হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইদ্রীস আলী।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাধা, নমিতা ও কাকলি বলে, খেলাধুলা দূরের কথা, বিদ্যালয়ের মাঠ দিয়ে চলাচল করাও বেশ কষ্টকর। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ বাঁশের গুতায় আহত হচ্ছে।
অভিভাবক মোস্তাফিজার ও লায়ন বলেন, বিদ্যালয়ের যে অংশে দোকানঘর বসেছে, সেই এক একর জমি পেরিফেরি করে সম্পূর্ণ বাজার বসাতে ভুমি অফিসকে বলা হলেও কাজ হচ্ছে না। এটি করা হলে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা খেলার মাঠের সঙ্গে পড়াশোনার পরিবেশও ফিরে পেতো।
মহিষাশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইদ্রীস আলী বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জমিতে দীর্ঘদিন ধরে হাট ও ইজারার বিধি চলে আসছে। তাই আমিও বিগত সময়ের রীতি মেনে ইজারা দিয়েছি’।
তবে বাঁশের হাট শুধুমাত্র সপ্তাহে একদিন বসে বলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না বলেও দাবি করেন তিনি।
মহিষখোচা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা শামছুল আলম বলেন, বিদ্যালয়ের জমি হিসেবে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। তবে বাজার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকলে পেরিফেরির জন্য আবেদন করা হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চাঁন মিয়া জানান, বিদ্যালয়ের মাঠের পরিবেশ বিনষ্ট হয়, এমন কাজ করা বেআইনি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৭
এএসআর