ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

অছাত্র আর বিতর্কিতদের নিয়ে রাবি ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
অছাত্র আর বিতর্কিতদের নিয়ে রাবি ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী সোহরাব মিয়াকে মারধরের ঘটনা তদন্ত করার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি করেছে শাখা ছাত্রলীগ। 

কিন্তু কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে তাদের প্রত্যেকে বিতর্কিত ও কেউ আবার অছাত্র। বিভিন্ন সময়ে অপকর্মের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

তাই এ কমিটি কতটুকু স্বচ্ছ তদন্ত করতে পারবে বা করবে সেই প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের।  

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) মধ্যরাতে শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হলের ছাদ থেকে ডেকে নিয়ে সোহরাবকে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মী আসিফ ও নাহিদ। মারধরে সোহরাবের মাথা ফেটে যায় ও বাম হাতের কনুইয়ের নিচে ও উপরের হাড় ভেঙে যায়। তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। ঘটনার পর থেকে মারধরকারী ছাত্রলীগ কর্মীরা পলাতক রয়েছেন। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাটি খতিয়ে দেখার জন্য শনিবার (১৬ নভেম্বর) চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শাখা ছাত্রলীগ। সেখানে সদস্য করা হয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজ আল আমিন, সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাব্বির হোসেন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে শাখা ছাত্রলীগ।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সহ-সভাপতি মাহফুজ আল-আমিনের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে অনেক আগেই। ছাত্রলীগের একাধিক সহ-সভাপতি নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘২০০৮-০৯ সালের দিকে মাহফুজ আল আমিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু এখনও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন। কিছুদিন আগে তিনি বিয়ে করেছেন। বিবাহিত হওয়ার পরও তাকে এখনো ছাত্রলীগের পদে রাখা হয়েছে। এছাড়াও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে শিবিরের সঙ্গে লিয়াজোঁ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দলে হাইব্রিড বলে পরিচিত মাহফুজ আল আমিন।

চলতি বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্তের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতাকর্মী শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে তিন শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। গত ২২ অক্টোবর শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে বাবু নামে এক দোকানির কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে। ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে তিনি ড্রপ আউট হয়েছেন বলে জানা গেছে।

তদন্ত কমিটির অন্যতম শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক সাব্বির হোসেন। ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই অন্যের হয়ে প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হন সাব্বির। তার বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে মামলা হয়। ওই সময় বেশ কিছুদিন জেলও খাটেন তিনি। তার বিরুদ্ধে হলের সিট সংক্রান্ত বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী তরিকুলের ওপর হামলাকারীদের অন্যতম। তরিকুলকে মারধরের ধারণকৃত ভিডিওচিত্রে কালো টি-শার্ট পরিহিত অবস্থায় বাঁশ দিয়ে তরিকুলকে পেটাতে দেখা যায়।  

বিতর্কিত ও অছাত্ররা যেখানে নিজেরাই অনিয়মের মধ্যে ডুবে আছেন, যাদের কাছে অনিয়মটাই নিয়ম তাদের দ্বারা সোহরাবকে মারধরের তদন্ত কতটুকু স্বচ্ছ হবে তা নিয়ে সংশয়ে বিশবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।  

তারা বলছেন, যারা বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ নানা অপকর্মে জড়িত তাদের দেওয়া হয়েছে তদন্তের দায়িত্ব। এর মাধ্যমে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তামাশা করছে। সন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করার জন্য আরেকজন সন্ত্রাসীকে দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের আড়াল করার চেষ্টা তাদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, যাদের ওপর তদন্তভার দেওয়া হয়েছে দলে তাদের অনেক অবদান রয়েছে। বিগত সময়গুলোতে তারা বিভিন্নভাবে সংগঠনের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করে গেছেন। আমরা আশাবাদী অবশ্যই তারা নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ রিপোর্ট জমা দেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘন্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।