ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তিতে ধার্যকৃত ৫ হাজার টাকা উন্নয়ন ফি বাতিল দাবিতে অব্যাহত আন্দোলনে বাঁধা দেওয়া হলে ছাত্র ধর্মঘট ডাকার হুমকি দিয়েছেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় অযৌক্তিকভাবে নতুনভাবে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা উন্নয়ন ফি নিচ্ছে।
তারা আরো ঘোষণা দেন, চলমান কর্মসূচিতে পুলিশ বা ছাত্রলীগ নতুন করে কোন ধরণের বাঁধা দিলেই ক্যাম্পাসে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে।
প্রগতিশীল ছাত্রজোট সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় দিনের মত তাদের অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দফায় দফায় দিনভর উত্তাল ছিলো ক্যাম্পাস।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত ভাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিন মিনিটে সংসদে পাশ করা হয়েছে।
অথচ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর আবাসিক হল, ২৭ (৪) সংশোধনসহ সমস্যার কথা চিন্তা করে সরকার দ্রুত কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী ২৭ (৪) ধারা সংশোধনের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন কবে হবে তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।
এদিকে উপাচার্য বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষক লাঞ্ছিতের অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রক্টোরিয়াল বডি এবং সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে কর্মসূচিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম ভূইয়া কেউই অংশ গ্রহণ করেননি।
২০ মিনিট স্থায়ী এ মানবন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মুষ্টিমেয় প্রগতিশীল ছাত্র নামধারীরা বহিরাগতদের নিয়ে আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি খারাপ করছে। শিক্ষকদের সঙ্গে অছাত্রসুলভ আচরন করছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। মানবন্ধনের পাশেই উত্তেজিত আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
শিক্ষকদের কর্মসূচির বিষয়ে ছাত্রনেতারা ব্যাংক অবরোধকালে শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, মঙ্গলবার আন্দোলনে ছাত্রলীগ ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
তারা আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য এ কর্মসূচি করেছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রক্টোরিয়াল বডি আন্দোলনে বাঁধা দেয় এবং তাদের ব্যানার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় আহবায়ক শরীফুল চৌধুরী। এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহমেদ আবীর, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি তামিদা ইসলাম তানিয়া, ছাত্র মৈত্রির সভাপতি সৌরভ মন্ডল, ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা ও ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান শ্রাবণ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
তারা বলেন, তাদের আন্দোলন দমাতে প্রশাসন তাদেরকে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সাম্প্রদায়িক তকমা লাগানোর চেষ্টা করছে। আমরা তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এদিকে ছাত্রজোটের আন্দোলনে সংহতি এবং ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে সকাল থেকে কয়েকশ’ সাধারণ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে । এ সময় তারা অবিলম্বে উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবি জানান। এতে শতাধিক ছাত্রীর অংশ গ্রহণ ছিলো চোখে পড়ার মত।
এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রিপোর্টার বলার পর তিনি একটি মিটিং-এ ব্যস্ত রয়েছেন বলে ফোন রেখে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘন্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১১