খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে (খুবি) আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে চান নবনিযুক্ত ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
শনিবার (৫ জুন) দুপুরে বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা জানান ভিসি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুসের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক প্রফেসর শরীফ হাসান লিমন প্রমুখ।
মতবিনিময় সভার শুরুতে ভিসি ড. মাহমুদ হোসেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিবারের নিহত সদস্যদের এবং ৩ নভেম্বর জেলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার জাতীয় চার নেতা ও নব্বইয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। একই সঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, বিভিন্ন সংগঠনসহ আপামর সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের এবং বিশেষ করে সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিকমানে পরিণত করতে অর্জন ও অভীলক্ষ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মধ্যে একমাত্র ছাত্ররাজনীতিমুক্ত, সেশনজটমুক্ত, শতভাগ একাডেমিক ক্যালেন্ডার মেনে চলা বিশ্ববিদ্যালয়। এ সময় তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু গবেষণার সাফল্য, অতিসম্প্রতি গৃহীত পদক্ষেপ ও প্রাথমিক পরিকল্পনাগুলো সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
তিনি আরও বলেন, বিগত কয়েক মাস এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন না। ফলে দায়িত্বভার গ্রহণের দিন থেকেই আমাকে জমে থাকা দাপ্তরিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজ শুরু করতে হয়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান একক চেষ্টায় সমৃদ্ধিলাভ করতে পারে না। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের অবদান থাকে। সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাফল্যের পথে এগিয়ে যায়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও ভাবমূর্তি বাড়াতে, দেশ-বিদেশে তার সুনাম, সম্মান ও সাফল্যের সংবাদ ছড়িয়ে দিতে সাংবাদিকরা অনন্য ভূমিকা পালন করে থাকেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের নানামুখী উদ্যোগ নেন। তিনি দেশকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এ প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেই খুলনা বিভাগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণের কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে নিহত হওয়ায় এ উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে বৃহত্তর খুলনার আপামর মানুষ বিভাগীয় শহর খুলনাতেই এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নজিরবিহীন আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলেন এবং তারই ফসল আজকের এ বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর নাম প্রথমেই আমাদের স্মরণ করতে হয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তার নাম চির অম্লান হয়ে থাকবে।
ভাইস-চ্যান্সেলর আরও বলেন, ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ৪টি ডিসিপ্লিনে ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি স্কুল (অনুষদ) এর অধীনে ২৯টি ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত ব্যাচেলর ডিগ্রি, ব্যাচেলর অব অনার্স ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রি, এম ফিল এবং পিএইচডি প্রদান করা হয়। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা ৫০৭, শিক্ষার্থীরা সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯। কর্মকর্তার সংখ্যা ৩০৭ ও কর্মচারীর সংখ্যা ৪০৭।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে এবং শৃঙ্খলা ধরে রাখতে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভাইস-চ্যান্সেলর বলেন, আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি- আমার মেয়াদে কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিহিংসার শিকার হবে না এবং কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। আমি সবার সহযোগিতা নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২১
এমআরএম/আরআইএস