ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

যোগ্যতা নেই, তবুও হলেন রাবির শিক্ষক

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২১
যোগ্যতা নেই, তবুও হলেন রাবির শিক্ষক

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান মেয়াদের শেষ দিন অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহক) ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন।

এর মধ্যে শিক্ষক পদে ৯ জন, কর্মকর্তা পদে ২৩ জন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদে ৮৫ জন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে ২৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তাদের মধ্যে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন ইন্দ্রনীল মিশ্র।  

অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা অনুসারে ইন্দ্রনীলের আবেদনের যোগ্যতা নেই। তিনি দ্বিতীয় বিভাগে অনার্স পাস করেছেন। এমনকি একটি কোর্সে অকৃতকার্যও হয়েছিলেন। তার বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন মিশ্র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সোবহানের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে এই ‘অবৈধ’ নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ইন্দ্রনীল মিশ্রের বিএসসি (অনার্স) পরীক্ষার রোল নম্বর ০৬১১৫৬২২। তার ২০১০ সালের এমএসসি পরীক্ষা ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার অবস্থান পঞ্চম। ২০০৯ সালের বিএসসি (অনার্স) পরীক্ষা ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। যে ১৪ জন শিক্ষার্থী দ্বিতীয় বিভাগ পেয়েছিলেন সেখানেও তার অবস্থান দশম। এতে ৪০৩ নম্বর কোর্সে তিনি অকৃতকার্যও হয়েছেন। ফলাফল খারাপ হওয়ায় এমএসসিতে থিসিস গ্রুপে যাওয়ার সুযোগ পাননি তিনি।

যোগ্যতা না থাকলেও ইন্দ্রনীল মিশ্রকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এমদাদুল হক। তিনি বলেন, বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিলো। এর শর্ত অনুযায়ী ইন্দ্রনীলের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা নেই। মৌখিক পরীক্ষা না নিয়েই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আবার এমন একজনকে নিয়োগ দেওয়া হলো যিনি কোনোভাবেই শিক্ষক পদে কাম্য নন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ইন্দ্রনীল মিশ্রের বাবা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন মিশ্রকে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এদিকে তার ছেলের ফোন নম্বর না পাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, কেউ একটি কোর্সে অকৃতকার্য হলেও পরে পরীক্ষা দিয়ে পাস করলে এবং নিয়োগের জন্য আবেদন যোগ্যতা থাকলে আবেদন করতে পারবেন। তবে অকৃতকার্য হওয়া একজন ছাত্রের ক্ষেত্রে ঠিক নয়।  

জানা যায়, গত ৬ মে উপাচার্য হিসেবে শেষ কার্যদিবস পালন করেন অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। মেয়াদের শেষ দিনেই অ্যাডহকে নিয়োগ দেন ১৪১ জনকে। এর মধ্যে শিক্ষক পদে ৯ জন, কর্মকর্তা পদে ২৩ জন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদে ৮৫ জন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে ২৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তান, স্ত্রী ও স্বজন, ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মী ও সাংবাদিক রয়েছেন।

বিতর্কিত এই নিয়োগকে অবৈধ উল্লেখ করে এদিন সন্ধ্যায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তদন্ত করে গত ২৩ মে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। অবৈধ নিয়োগে তদন্ত কমিটি বিদায়ী উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৩ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।