ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অর্থ সহায়তা চাইলেন শিক্ষক!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৬ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২১
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অর্থ সহায়তা চাইলেন শিক্ষক!

যশোর: যশোর উপশহর মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক শরিফুল ইসলাম। অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৫ সাল থেকে কলেজটিতে লেকচারার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি।

এমপিওভুক্ত না হওয়ায় কলেজ থেকে যে সামান্য বেতন পেতেন, করোনা মহামারির কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় সেটিও পাচ্ছেন না ৫ মাস ধরে। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের ৪ সদস্য নিয়ে পড়েছেন চরম অর্থ সংকটে।

সামাজিক মর্যাদার কারণে এত দিন কারোও কাছে সহায়তার হাত না পাতলেও, নিরুপায় হয়ে এবার আর্থিক সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।  

তার ব্যবহৃত ফেসবুকে স্ট্যাটাসে শরিফুল ইসলাম লিখেছেন, `আমি শরিফুল ইসলাম। প্রভাষক উপশহর মহিলা কলেজ যশোর। আমি একজন নন-এমপিও অর্নাস শিক্ষক। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে কলেজ থেকে যে সামান্য বেতন পেতাম তা দীর্ঘদিন ধরে পাচ্ছি না। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাকে কিছু নগদ অর্থ বা খাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে উপকৃত হব’। আমার বিকাশ নাম্বার ০১৭২৪-৯০৬৮২০।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, চলমান করোনা মহামারিতে শিক্ষার্থীদের বেতন ও ভাতা আদায় বন্ধ রয়েছে। আয় না থাকায় কলেজের নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন ও ভাতা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া কলেজের ফান্ড শূন্য থাকায় আমাদের বেতন দিচ্ছে না। আমি শুধু একা না, আমার মতো নন-এমপিও শিক্ষককেরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পরিবার নিয়ে দিন পার করাই এখন দায়! অনেকে ত্রাণ বা সরকারের আর্থিক সহায়তাও পাচ্ছে না। বিশেষ করে সামাজিক মর্যাদার কারণে অনেকেই ত্রাণের জন্য বাইরে যোগাযোগ করছেন না। দীর্ঘদিন ধরে স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে সংসার চালিয়ে আসছি।  

তিনি আরও বলেন, করোনাকালে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের বেতন বন্ধ থাকায় এবং সরকার থেকে আর্থিক সাহায্য না পাওয়ায় যশোরের অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসা, দিনমজুরের কাজ করছেন। অনেকে টিউশনি করার চেষ্টা করছেন, কেউবা মাছ ধরে ব্যবসা করছেন।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম যশোর শাখার আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম বলেন, মহামারি করোনার কারণে যশোরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন যশোরে ২৫টি বেসরকারি কলেজে অনার্স কোর্সের নন-এমপিও তিন শতাধিক শিক্ষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ও ভাতাও নেওয়া যাচ্ছে না। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিন ধরে বেতন বন্ধ। গত বছর সরকার নন-এমপিও শিক্ষকদের ৫ হাজার করে টাকা দিয়েছিল, কিন্তু সেটি চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। করোনাকালে সরকারিভাবে বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদার কারণে অনেকে ত্রাণের জন্যও লাইনে দাঁড়াতে পারছেন না। তাই অনেক শিক্ষক তাদের পেশা বদল করে কৃষি কাজে যোগ দিয়েছেন।  

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন এমপিওভুক্ত না হওয়া ও প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ বেতন পরিশোধ না করায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তাই  জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজসমূহের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরকে অবিলম্বে ‘জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮’ তে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান ওই শিক্ষক নেতা।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, যশোর উপশহর মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক শরিফুল ইসলামের ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানতে পেরে তাকে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ উপহার দেওয়ার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মতো যারা আরও কর্মহীন ও অসহায় রয়েছেন তাদেরও ত্রাণ কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে।  

এছাড়া জেলায় চলমান কঠোর বিধিনিষেধে যারা কর্মহীন হয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২১
ইউজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।