ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন যাত্রা শুরু করে, তখন ভারতীয় উপমহাদেশ ও এশিয়ায় অনেক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো-ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া; পাকিস্তানের কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া (ইউপিএম)।
এসব বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের একাডেমিক কার্যক্রম দিয়ে বৈশ্বিক সূচকে এগিয়ে গেলেও ব্যতিক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)।
১২ বিভাগ, ৬০ শিক্ষক ও ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯২১ সালের পহেলা জুলাই যাত্রা শুরু করে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এ প্রতিষ্ঠান। তিনটি ভিন্ন সময় (ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশ) পার করে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় (দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় [১৯২২], আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় [১৯২০], বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় [১৯২১]ও জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া [১৯২০] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক। এর মধ্যে দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে র্যাংকিং প্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যুক্তরাজ্যভিত্তিক কিউএস-এ। আরেকটির সূচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান্তরাল।
অপরদিকে মালয়েশিয়ার শীর্ষে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রাচীন ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া (ইউপিএম) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩১ সালের ২১ মে। ৫২.২ স্কোর নিয়ে বৈশ্বিক র্যাংকিং ১৩২। পাকিস্তানের শীর্ষে থাকা তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রাচীনতম কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণা ও আন্তর্জাতিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বিবেচনায় কিউএসএস র্যাংকিং ৪৫৪ তে অবস্থান করছে।
বৈশ্বিক র্যাংকিং বিবেচনায় না নিলেও এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ঢাবির অবস্থান নিম্নমুখী। এশিয়ায় শীর্ষে (বৈশ্বিক ১১) অবস্থান করছে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। ১৯০৫ সালে মেডিকেল কলেজ হিসেবে যাত্রা এ প্রতিষ্ঠান ১৯৪৯ সালে মালয় ইউনিভার্সিটির সিঙ্গাপুর ক্যাম্পাস হিসেবে রূপ লাভ করে। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর নামধারণ করে।
কিউএসের হিসাব বলছে, প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা উন্নতমানের। একই সঙ্গে সাড়ে ৫ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। সব সূচকে এটি এশিয়ার সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে এশিয়ার মধ্যে ঢাবির অবস্থান ৩৫১-৪০০ এর মধ্যে।
র্যাংকিং নির্ধারণে একাডেমিক খ্যাতি, চাকরির বাজারে সুনাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, শিক্ষকদের গবেষণা ও আন্তর্জাতিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে বিবেচনায় নেওয়া হয়।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯২২ সালে। বর্তমান বিশ্ব র্যাংকিং এ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৫০০-৫১০ এ।
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলা হয়েছে, গবেষণা মান খুবই উচ্চমানের। এতে আর্ন্তজাতিক শিক্ষার্থী আছে ৩২২ জন। ফ্যাকাল্টি ১ হাজার ১৭১ জন। জামিয়া মিল্লিয়ার অবস্থান ৭৫১-৮০০ এরমধ্যে। প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক খ্যাতি কম থাকলে গবেষণা ও অন্যান্য সূচকে বেশ এগিয়ে। আর আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ৮০১-১০০০ এর মধ্যে। র্যাংকিং অনুযায়ী ঢাবির রিসার্চ আউটপুট মিড়িয়াম। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মাত্র ৪৮ জন।
সমসাময়িক বিশ্ববিদ্যালেয়ের তুলনায় ঢাবির অবস্থান নিম্নমুখী থাকার বিষয়ে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শতবর্ষী অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই, প্রশাসনের রাজনীতিকরণ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সমস্যা প্রশাসনের রাজীনীতিকরণ। এখানে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ সবাই রাজনীতির মানুষ। শিক্ষক রাজনীতি সিদ্ধহস্ত। বঙ্গন্ধুর বুদ্ধিজীবীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন, মূল্যায়ন করেছেন। পচাত্তর পরবর্তী সময় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং নির্ধারণে উপাচার্যের মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান পিছিয়ে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, শতবর্ষী অন্য বিশ্ববিদ্যলয়গুলো নিজেদের ক্যাম্পাসকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে পেরেছে। যেটা আমরা পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং নির্ধারণে যেটি বড় নিয়ামক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যানে সার্বিক বিষয় লক্ষ রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গবেষণা ও উদ্ভাবনে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২১
এসকেবি/এএটি