ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দক্ষিণ কোরিয়ায় শিক্ষাখাত দেখভাল করেন উপ-প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২১
দক্ষিণ কোরিয়ায় শিক্ষাখাত দেখভাল করেন উপ-প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় শিক্ষাখাত দেখভাল করেন একজন উপ-প্রধানমন্ত্রী। দেশটিতে শিক্ষকেরাও সিভিল সার্ভিসের সদস্যভুক্ত।

সেখানে শিক্ষা প্রশাসন স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে।

স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে উন্মুক্ত মঞ্চ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ও এডুকেশন একাডেমি আয়োজিত 'শিক্ষায় মডেল রাষ্ট্রের সন্ধানে প্রসঙ্গ দক্ষিণ কোরিয়া' শিরোনামে ধারাবাহিক ওয়েবিনারে এতথ্য জানানো হয়েছে।  

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য এম এ মতিন, বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উপকমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. এজেএম শফিউল আলম ভূঁইয়া এবং আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব অধ্যাপক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং  মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. একিউএম শফিউল আজম।  

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী কলেজের অধ্যাপক ড. ওয়াসীম মো. মেজবাহুল হক এবং ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন ড. কাজী জাকির হোসেন। শুক্রবার বিকেলে ভার্চু্যয়াল প্লাটফর্মে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।  

প্রবন্ধ উপস্থাপক তথ্য তুলে ধরে দেখান যে, ১৯৬৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার মাথাপিছু আয় ছিল ১০৯ ডলার এবং বাংলাদেশের ১০৬ ডলার, যা প্রায় কাছাকাছি। ২০১৯ সালে এসে দক্ষিণ কোরিয়ার মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ৩১ হাজার ৮৪৬ ডলার আর বাংলাদেশের ১ হাজার ৮৫৫ ডলার। প্রবন্ধ উপস্থাপক এ তথ্যের বরাদ দিয়ে যেটি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার আজকে যে অগ্রগতি তার মূলে রয়েছে সে-দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রবন্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপক দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার স্তরসমূহ, শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি, শিক্ষা প্রশাসন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি দেখান যে,  দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য দিক- এখানে সাধারণত কোনো ভর্তি পরীক্ষা নেই, শিক্ষকতা সেখানে একটি উচ্চ চাহিদা সম্পন্ন পেশা।

প্রবন্ধে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ায় যারা শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত তাদের অন্তত ৮০ ভাগেই প্রথম পছন্দ শিক্ষকতা। শিক্ষক নিয়োগ সম্পর্কে প্রবন্ধে বলা হয়, সেখানকার সিভিল সার্ভিসে যোগ্যতার কোনো মানদণ্ড নেই, যে কেউ পরীক্ষার মাধ্যমে সিভিল সার্ভিসের সদস্য হতে পারে কিন্তু শিক্ষকতার জন্য অবশ্যই ন্যূনতম যোগ্যতা আবশ্যক।  

প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে ওয়েবিনারের প্রধান আলোচক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ  কায়কোবাদ বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড এই কথাটি বলেই আমরা আমাদের দায়িত্ব শেষ করেছি। শিক্ষার গুরুত্ব আমরা যথাযথভাবে অনুধাবন করি কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমাদের এ ভূখণ্ডে ১২১৩টি শিক্ষা কমিশন-কমিটির রিপোর্ট প্রণীত হয়েছে। অনেক অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদেরা এ রিপোর্টগুলো লিখেছেন। কিন্তু অনেক বছর হয়ে গেল, তার বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাইনি। অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেন, শুধু এই সরকারের আমলেই না সকল সরকারের আমলেই শিক্ষা তেমন একটা অগ্রাধিকার পায়নি। ব্যতিক্রম হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শিক্ষাখাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ রেখেছিলেন, অথচ বর্তমানে ২ শতাংশের মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে। বলা হয়ে থাকে ৬ শতাংশের কথা কিন্তু সেটি করা হচ্ছে না।  

অপর আলোচক মাউশির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক ড. শফিউল আজম বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার পেছনে মূল কারণ বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শনের অনুপস্থিতি। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন তার ভিত্তি হবে শিক্ষা।  

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য এম এ মতিন বলেন, শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও শিক্ষক। তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা বিকাশে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন ও ভাবনার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজ বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ায় চেয়েও উন্নত রাষ্টে পরিণত হতো। তিনি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এগুলোর জন্য আরও আলোচনা প্রয়োজন। শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন সমস্যা তিনি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে তুলে ধরবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এজেএম শফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা বা নীতি নিয়ে একটি বড় সমস্যা হলো সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয় না। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা প্রশাসন ও নীতিতে শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতেন।  
লাইভ স্ট্রিমিং-এ যুক্ত হয়ে ওয়েবিনারটি উপভোগ করেন শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২১
এমআইএইচ/এসআইএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।