ভোলা: বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে ভোলা'স চিল্ড্রেন স্পেশাল স্কুল বাংলাদেশ।
শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সূত্র জানিয়েছে, ভোলা শহরের চরনোয়াবাদ এলাকায় ২০০৫ সালের এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু।
লন্ডনের নাগরিক 'দিনা উইনার' ও 'ব্রুনা কলম্বো' এ প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন শুরু করেন। এরপর ২০০৬ সালের দিকে 'ভোলা'স' চিন্ড্রেন ইউকে'র অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে আসছে।
বর্তমানে এটি পরিচালনায় সহযোগীতা করছে 'ভোলা চিল্ড্রেন স্পেশাল স্কুল বাংলাদেশ' পরিচালনা কমিটি। ২০১৪ সালে এটি ট্রাস্ট হিসেবে এবং ২০১৮ সালে এটি সমাজসেবা থেকে নিবন্ধনভুক্ত হয়।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এমএ আলী এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বর্তমানে পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও প্রশিক্ষক নিরলসভাবে সু-শৃঙ্খল পরিবেশে ভোলা’স চিলডেন প্রতিবন্ধী স্কুলটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
এখানে বর্তমানে ৮৩ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। যারা সবাই বাক, শ্রবণ, বুদ্ধি, দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। এখানকার শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও ছবি আঁকায় একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে ছবি একেও চার বার পুরস্কার পেয়েছেন তারা।
জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ১০১ তম জন্মশত বার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতায় জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় তম স্থান অর্জন করে এ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
স্পেশাল অলিম্পক প্রতিযোগীতায় পুরস্কার পেয়েছে এ প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে একাধিক পুরস্কার অর্জন করেন তারা।
প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো. জাকিরুল হক বাংলানিউজকে জানায়, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু,যাদের বয়স পাঁচ বছর তাদের এখানে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। এসব শিশুদের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত লালন-পালন করা হয়। এখানে থাকা-খাওয়া, পড়াশুনা ও প্রশিক্ষণে কোন টাকা লাগেনা। বিভিন্ন এলাকার শিশুরা এখানে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন প্রতিবন্ধী শিশুরা শিক্ষা গ্রহণ করছে অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। এ স্কুলটির প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত অনেক তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান হয়েছে।
তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের শিশুদের স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে পাঠদান করানো হয়। ঈশারা ভাষায় বিশেষ কৌশলে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের পাঠদান করান শিক্ষকরা।
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা মাসুমা বেগম ও লিমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, শিশুরা ইশারা ভাষা বুজতে পারে, তাদের সেভাবেই পড়ানো এবং শিক্ষাদান করাই। যে যতটুকু নিতে পারবে তাকে সেভাবেই পড়ানো হচ্ছে।
এছাড়া এসব শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নৃত্য ও গানের দক্ষ প্রশিক্ষক।
নৃত্য প্রশিক্ষক শিক্ষক আসমা আক্তার বলেন, সপ্তাহে দুইদিন শিশুদের ডান্স ক্লাস করাই ইশারা ভাষায়।
এছাড়াও যত্নসহকারে শেখানে হচ্ছে কারিগরি শিক্ষাও।
সেলাই প্রশিক্ষক আসমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীরা বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী, তাদের ইশারা ভাষায় বুঝিয়ে হাতে কাজ এবং সেলাই শেখানো হয়, তারা সবাই মনোযোগ দিয়ে শিখছে। এদিকে পড়াশুনার পাশাপাশি সেলাই, উন্নতমানের রান্না, ওয়েলডিং ও কাঠের কাজ শেখানো হয় শিক্ষার্থীদের।
ভোল’স চিল্ড্রেন প্রতিবন্ধী স্কুলে চারটি পাকা ভবন রয়েছে। এর মধ্যে একটি একাডেমিক ভবন, দুইটি আবাসিক ও একটি অফিস কক্ষ। এছাড়া ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন এ প্রতিষ্ঠানে।
শুধু দ্বীপজেলা ভোলা নয়, সারাদেশের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা এখানে পড়াশুনা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বলেন, প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনের লক্ষে একটি আনন্দদায়ক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। এখানে তাদের বিশেষ চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে শিক্ষার জন্য সব ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি বছরই এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
তিনি বলেন, নিরাপদ ও সুখী আশ্রয়, প্রাতিষ্ঠানিক লেখা-পড়া, কারিগরি শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম এখন সারাদেশে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২১
এনএইচআর