বরিশাল: সরকার ঘোষিত সকল নিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারাদেশের ন্যায় বরিশালেও দীর্ঘ ১৭ মাস পর খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি কলেজগুলোতে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) ক্লাসের
কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
প্রথম দিনে এ বিদ্যালয়ে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বেশ উৎসাহ নিয়ে ক্লাস করেছেন। আবার শিক্ষকরাও দীর্ঘদিন পরে ক্লাসে পাঠদান পরিচালনা করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বিদ্যালয়ে শিক্ষাক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী খোকন চন্দ্র বর্মন বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে মহামারি করোনার কারণে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত বরিশালের এ বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন পাঠদান বন্ধ ছিল। তবে বিদ্যালয়টিতে আবাসিক ব্যবস্থা থাকায় এখানকার শিক্ষার্থীরা আমাদের সহায়তায় (আবাসিক শিক্ষক) পড়াশুনা চালিয়ে গেছেন। আর আবাসিকে থাকেন না এমন মাত্র একজন শিক্ষার্থী রয়েছে, সেও বাসায় থেকে নিয়মিত পাঠদান করেছে। ফলে কোনো শিক্ষার্থীর ঝড়ে পড়া কিংবা পিছিয়ে পড়ার মতো শঙ্কা নেই।
তিনি বলেন, করোনাকালে সরকারি নিয়মনীতি মেনে চলায় এবং আবাসিক এলাকার মধ্যেই থাকায় এ বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হননি। সবসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়েছে। ক্লাস কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিনে নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও মাস্ক ব্যবহারের ওপর শিক্ষার্থীদের বলা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেই মাস্ক সরবরাহ ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর প্রথম দিন থেকেই প্রতি বেঞ্চে
একজন করে বসতে বলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ থাকায় লকডাউন প্রত্যাহারের পর কিছু শিক্ষার্থী বাড়িতে অবস্থান করলেও প্রথম দিনে চতুর্থ ও পঞ্চম ক্লাশে শতভাগ উপস্থিতি ছিল।
শিক্ষক মেহেরাব হোসাইন বলেন, শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের পড়ানোই আমাদের কাজ। দীর্ঘদিন পরে ক্লাসে পাঠদান শুরু করতে পারায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরাও খুশি। এতোদিন ক্লাস না নিয়ে বেতন নিতে কেমন যেন লাগছিল।
আর দীর্ঘিদিন পরে ক্লাসে উপস্থিত হয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে সরাসরি পাঠাদান গ্রহণ করায় খুশির কথা জানিয়েছেন এ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার, চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল আক্তার, হাফসা
আক্তার, মোসা. হামিদা, ছাত্র শফিকুল ইসলাম, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মাশরাফি জাহান অরবি, ছাত্র আবু তালিব। তারা বলেন, গেল দেড় বছরের মতো আবাসিকে ও বাসায় থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি, গান শুনে, খেলাধুলা করে সময় কাটিয়েছি। কিন্তু ক্লাসের মজা পাইনি। আজ সবাই ক্লাস করছি, শিক্ষকদের কথা শুনছি। সবকিছু মিলে বেশ ভালোই লেগেছে।
এ বিদ্যালয়ের একমাত্র অনাবাসিক ছাত্রী পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মাশরাফি জাহান অরবি’র মা সিমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, করোনাকালে বাসায় বসে যতোটা সম্ভব পড়ানোর চেষ্টা করেছি। তবে বিদ্যালয়ের ঘাটতি থেকেই যায়, কারণ বিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণের পাশাপাশি তার মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। এখানে আসার পরই সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাস করতে গিয়ে অন্যরকম আনন্দ পাচ্ছে। আজ প্রথম দিনে অনেকটাই প্রাণবন্ত ছিল সে।
উল্লেখ্য এ বিদ্যালয়ের ১১০টি আসনের মধ্যে ৪৮ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে রয়েছে। যারমধ্যে প্রাথমিক স্তরে ৯ জন মেয়েসহ ২৭ জন রয়েছে, যারা এ বিদ্যালয় থেকেই নিয়মিত পাঠগ্রহণ করেন। মাধ্যমিক ও কলেজ স্তরে থাকা বাকি শিক্ষার্থীরা এখানকার আবাসিকে থেকেই বাহিরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাঠগ্রহণ করেন। যেমন জাগুয়া কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পুতুল আক্তার ১২ বছর ধরে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের আবাসিকে থাকেন। আজ কলেজ খোলার প্রথম দিনে তিনি এখান থেকে সেই কলেজে ক্লাস করার জন্য গিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহান কবির বলেন, এ বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়ার হার নেই বললেই চলে। আর সফলতার দৃশ্যও অনেক। ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক-কর্মচারী যারাই আছেন এখানে তারা সবাই আন্তরিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
এমএস/কেএআর