ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

স্বরূপে ফিরছে ‘শিক্ষানগরী’ রাজশাহী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
স্বরূপে ফিরছে ‘শিক্ষানগরী’ রাজশাহী

রাজশাহী: পদ্মা তীরের নির্মল বায়ু ও ‘শিক্ষানগরী’ রাজশাহী। শহরের প্রাণ হলো বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শহর ছেড়ে চলে যায় প্রাণের স্পন্দন জাগানো শিক্ষার্থীরা।

প্রায় দেড় বছর পর আবারও খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুয়ার। এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক স্বাভাবিক হয়েছে। দিন-ক্ষণ হিসেবে দীর্ঘ ৫৪৩ দিন পর খুলেছে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত না হলেও পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়েছে। এছাড়া মেডিক্যাল কলেজেও ক্লাস শুরু হয়েছে।

রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, রাজশাহীতে সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয় রয়েছে ১ হাজার ৫৮টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী দুই লাখ ৫৮ হাজার ৯০৬ জন। এছাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৪৭টি। এর শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। সব মিলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণার পর থেকে অনেকে চলে এসেছেন বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে। এতেই স্বরূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে শিক্ষানগরী। রাজশাহীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পদচারণা, চঞ্চলতা, কোলাহল, গল্প, আনন্দ, উল্লাস, ব্যস্ততা ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা সবকিছু বেশ দৃশ্যমান হয়েছে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের অন্যতম বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দফতরিক কার্যক্রমও চলছে পুরোদমে। এছাড়া চলতি মাসের ১৭ তারিখের পর থেকে ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা ফিরতে শুরু করেছে। আবাসিক হল খোলা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী মেসে উঠে নিজেদের পড়াশোনা ও একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে শুরু করেছেন।  

সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট, টুকিটাকি চত্বর, আমতলা, শহীদ মিনার ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনসহ প্রতিটি একাডেমিক ভবনের সামনে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আড্ডা-গল্প করছেন।

এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশনারি ও ফটোকপির দোকানগুলোতেও উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এমন দৃশ্য করোনার পূর্ববর্তীকালীন সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। হালে শিক্ষার্থীদের এমন পদচারণায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে ক্যাম্পাস।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে এসে অনেক ভালো লাগছে। করোনার মধ্যে ইচ্ছে থাকার পরও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়নি। অনেককে একসঙ্গে দেখে বেশ ভালো লাগছে। বন্ধের মধ্যে ক্যাম্পাস আগের চেয়েও বেশি সবুজ ও সুন্দর হয়েছে।  

ক্যাম্পাসের কাজলা গেটে কথা হয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উদয় আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী। আমাদের পরীক্ষার চূড়ান্ত রুটিন প্রকাশ করায় চলে এসেছি। নতুন করে মেসে ওঠায় কিছু জিনিস কিনতে হচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন পর সব বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বেশ ভালো লাগছে।  

একই রকম দৃশ্যপট পাশেই থাকা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ক্যম্পাসে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত এ ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, সেন্ট্রাল ফিল্ড ও শহীদ মিনারের পাশে শিক্ষার্থীরা বসে গল্প করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সজীব আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি বলেন, আমাদের পরীক্ষার খসড়া সিদ্ধান্ত শিক্ষকরা জানিয়ে দিয়েছেন। সেজন্য আমরা ক্যাম্পাসে এসেছি। এ সুযোগে দীর্ঘদিন পড়াশোনার বাইরে থাকায় বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডিও করতে পারবো।

রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের প্রথম প্রস্তুতি চলছে আগামী ১৭ অক্টোবরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক করা। সাধারণভাবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে আবাসিক হল খোলা হয় সেটি নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। দীর্ঘদিন ধরে হল বন্ধ থাকায় সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করারও একটা ব্যাপার আছে। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া সরকার কোভিড পরিস্থিতিতে সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে ভাবছে। তাদের ভাবনার সঙ্গে আমাদের ভাবনারও সামঞ্জস্য রাখা দরকার। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত হল খোলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করছে।

রুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সেলিম হোসেন বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি। মোটামুটি সব প্রস্তুতিই শেষ হয়েছে। বিভিন্ন হলের সামনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ হল পরিষ্কার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে কাজ চলছে। সরকারের সিদ্ধান্ত পেলেই আমাদের প্রতিষ্ঠান খুলতে কোনো দেরি হবে না। আমরা সব দিক থেকে প্রস্তুত আছি।  

এদিকে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবার আগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে। ফলে সব শিক্ষার্থী নিজ ক্যাম্পাসে এসেছে। এছাড়া করোনার সময়ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো মেডিক্যাল কলেজগুলো বন্ধ হয়ে যায়নি। এসব প্রতিষ্ঠান মহামারির মধ্যে সবচেয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। তবুও অনেক শিক্ষার্থী না থাকায় ক্যাম্পাসে তেমন কোনো কোলাহল ছিল না। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আবারও প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে পেয়েছে পুরো ক্যাম্পাস।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের (রামেক) শিক্ষার্থী লাবণ্য রহমান বলেন, ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে। তাই ক্যাম্পাসে চলে এসেছি। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসের নতুন রূপ ও বন্ধুদের দেখে ভালো লাগছে। সবার সঙ্গে দেখা হয়ে করোনা আসার আগের দিনের কথা মনে পড়ছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, গত সোমবার থেকে আবারও ক্লাস শুরু হয়েছে। আপাতত তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করার সুযোগ পাচ্ছে। একটি ব্যাচে ২২০ জন শিক্ষার্থীকে দু’ভাগে ভাগ করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বাত্মক সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।