ইবি: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে পরিদর্শকের ভুলে স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কায় পড়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। ভর্তিচ্ছুদের অভিযোগ পরীক্ষা চলাকালে কমপক্ষে তিনটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রে স্বাক্ষর করেননি দায়িত্বে থাকা পরিদর্শকগণ।
ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি)।
জানা যায়, রোববার (১৭ অক্টোবর) সারাদেশের ২৬টি কেন্দ্রে গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সে অনুযায়ী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ৭০৮৫ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ভবনের তিনটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রে দায়িত্বরত পরিদর্শকগণ স্বাক্ষর করেননি। তিনটি কক্ষের মধ্যে ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভবনের ২৪৪ ও ৪২৭ নম্বর কক্ষ এবং রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের ১০২ নম্বর কক্ষ। এ তিন কক্ষে মোট ১৬২ জন শিক্ষার্থীর আসন বিন্যাস করা হয়। সেখানে হাতেগোনা দু-একজন বাদে সবাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এসব শিক্ষার্থীর কারো প্রবেশপত্রেই পরিদর্শকগণ স্বাক্ষর করেননি।
পরীক্ষা শেষে ওই কক্ষের শিক্ষার্থীরা বের হয়ে অন্যকক্ষের শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রে পরিদর্শকের স্বাক্ষর থাকতে দেখেন। এসময় তারা বিষয়টি সাংবাদিকদের অভিহিত করেন। একইসঙ্গে এ সমস্যার কারণে তাদের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হাতছাড়া হবে বলেও আশঙ্কা করেন।
এদিকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার শিক্ষকদরে জন্য দেওয়া নির্দেশিকাতে শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রে পরিদর্শকের স্বাক্ষরের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে উল্লেখ থাকায় শিক্ষার্থীদের শঙ্কা আরও বেড়েছে। ৫ নম্বর নির্দেশিকায় উল্লেখ্য, ‘পরিদর্শকগণ শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্রে এমনভাবে স্বাক্ষর করবেন যেনো স্বাক্ষরের অর্ধেকাংশ শিক্ষাথীদের ছবির উপরে থাকে। ’ এছাড়াও শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রের নির্দেশিকাতেও স্বাক্ষরের বিষয়টি তুলে আনা হয়েছে। নির্দেশিকাতে উল্লেখ্য, ‘পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিক্ষকগণ ওমএমআর শিট ও প্রবেশপত্রে স্বাক্ষর করবেন।
নির্দেশনা থাকার পরও পরিদর্শকদের এ ভুলের কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কা করছেন। সাহারা বিনতে শরিফ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আগে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ ছিল। কিন্তু বর্তমানে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় সে সুযোগটা আর আমরা পাচ্ছি না। এক পরীক্ষাতেই আমাদের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাগ্য নির্ধারণ হবে। আমাদের পরীক্ষার কক্ষে স্যাররা কারো প্রবেশপত্রে স্বাক্ষর করেননি। হল থেকে বেরিয়ে এসে অন্যদের প্রবেশপত্রে স্বাক্ষর দেখায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও সাক্ষাৎকারে আমরা ঝামেলায় পড়ে যাবো। বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই শঙ্কায় আছি। ’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে দুইজন শিক্ষার্থী ইউনিট সমন্বয়কারীর মাধ্যমে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগে তারা বিষয়টি নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তবে আবেদনপত্র জমা দিতে গেলে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান তাদের ওমএমআর এবং উপস্থিত শিট যাচাই করে প্রবেশপত্রে স্বাক্ষর করে দেন। পাশাপাশি তাৎক্ষণিক অন্যরা আসলেও তাদের স্বাক্ষর করবেন বলে জানিয়েছিলেন।
তবে প্রবেশপত্রে স্বাক্ষরের বিষয়ে পূর্ববর্তী কোনো নির্দেশনা ছিল না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কক্ষ পরিদর্শকগণ।
রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের ১০২ নম্বর কক্ষের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. মোস্তাক মো. মুনওয়ার আলী বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতির নির্দেশিকায় আমরা সেরকম কোনো নির্দেশনা পাইনি তাই আমরা শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রে স্বাক্ষর করিনি। ’
বিষয়টি পরিদর্শকদের ভুল কিন্তু সহজেই সমাধানযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন ইউনিট সমন্বয়কারী। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ‘এ’ ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ বলেন, ‘যেহেতু এটি কমন সমস্যা ফলে কমনলি সলভ করা হবে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই। বিষয়টি নিয়ে আমার গুচ্ছ পরীক্ষার কেন্দ্রীয় কমিটির কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। উনারা শিক্ষার্থীদের এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘মনে করি প্রবেশপত্রে সিগনেচার না থাকলে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করার আরও অনেক সুযোগ আছে। তারপরও যে সব শিক্ষার্থী আমাদের কাছে এসেছে আমরা সবকিছু যাচাই-বাছাই করে তার প্রবেশপত্রে স্বাক্ষর করে দিয়েছি। পাশাপাশি উপাচার্য স্যারকেও বিষয়টি অবহিত করেছি। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি দুই শিক্ষার্থীর অভিযোগ পেয়েছি। এ দুই শিক্ষার্থীসহ বাকি শিক্ষার্থীরা (যাদের প্রবেশপত্রে স্বাক্ষর হয়নি) যে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমরা বিষয়টি সমন্বয়ের চেষ্টা করবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২১
আরএ