বশেফমুবিপ্রবি: সমন্বিত গুচ্ছ পদ্ধতিতে দেশের ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় জামালপুরে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেফমুবিপ্রবি) কেন্দ্রে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২৪ অক্টোবর) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন বিশেষভাবে সক্ষম অদম্য সুরাইয়া জাহান।
মুর্শেদা ছফির জানান, হাত অকেজো থাকায় পা দিয়ে লিখে ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন সুরাইয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনের ২৮ নম্বর কক্ষে মেঝেতে মাদুরে বসে পরীক্ষা দেন সুরাইয়া। এই কক্ষে ভর্তিচ্ছুক পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩০ জন। সুরাইয়া শেরপুর মডেল গার্লস কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৪ পেয়েছেন। এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছিলেন জিপিএ-৪.১১।
সকালে শেরপুর থেকেই বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে বাবা ছফির উদ্দিন ও মা মুর্শেদা ছফিরের সঙ্গে আসেন সুরাইয়া। তাদের গ্রামের বাড়ি শেরপুর জেলা সদরের আন্দারিয়া সুতির পাড়। ছফির উদ্দিন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। পরীক্ষার হলে সুরাইয়া যখন পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তখন হলের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন মা মুর্শিদা ছফির।
মুর্শিদা ছফির বলেন, পরীক্ষার হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিন মেয়ের মধ্যে সুরাইয়া বড়। দ্বিতীয় মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই সুরাইয়া জন্মগ্রহণ করেছেন। কিন্তু তার খুবই ইচ্ছা পড়াশোনা করার। আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে আমাদের রয়েছে নানা সংগ্রামের গল্প। নানামুখী সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও আমরা তাকে উৎসাহ দিয়েছি। তার জন্য কখনই মন খারাপ করিনি। আমরা তাকে সফল হওয়ার জন্য তার সংগ্রামের সঙ্গী হয়ে থাকবো। আমাদের চাওয়া সুরাইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শেষ করবে এবং বড় কর্মকর্তা হয়ে দেশের সেবা করবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল পরিদর্শন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ এবং ট্রেজারার মোহাম্মদ আবদুল মাননান। এ সময় তারা সুরাইয়ার সার্বিক খোঁজ-খবর নেন।
উপাচার্য প্রফেসর ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, অদম্য উৎসাহ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের বিভিন্ন জায়গায় ভালো করছে। তাদের এ হার না মানা মনোভাব অবশ্যই প্রশংসনীয়। সুরাইয়াকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে। পড়াশোনায় আগ্রহ থাকলে যেকোনো বাধার মুখেও পড়াশোনা করা যায়। এর উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেওয়া এই ছাত্রী।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে দেশের ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগ মিলিয়ে মোট এক হাজার ৮২১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। গুচ্ছ ভর্তি ব্যবস্থায় ১৭ অক্টোবর ‘এ’ ইউনিটে বিজ্ঞান বিভাগের ৭০০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। রোববার (২৪ অক্টোবর) ‘বি’ ইউনিটে মানবিক বিভাগের ৭০০ জন ও ১ নভেম্বর ‘সি’ ইউনিটে বাণিজ্য বিভাগের ৪২১ জন গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে অংশ নিচ্ছেন।
ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য বশেফমুবিপ্রবির ওয়েবসাইট (www.bsfmstu.ac.bd), ফেসবুক পেজ ও www.gstadmission.ac.bd এ পাওয়া যাচ্ছে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী, আলাদা আলাদা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেবে এবং দিচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২১
এনটি