টাঙ্গাইল: সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা সরকারি শামসুল হক কলেজে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপে অতিরিক্ত ফি আদায় করার অভিযোগ উঠেছে।
প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাড়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা আদায় করা হলেও কোনো রশিদ দিচ্ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ৮ জুন শুরু হয়ে ২২ জুন পর্যন্ত ফরম ফিলাপের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের ফি অনলাইনে পাঠানোর শেষ সময় আগামী ২৩ জুন। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ ফি (চতুর্থ বিষয়সহ) দুই হাজার ৩৩০ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখার ১ হাজার ৭৭০ টাকা। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় কোনো শিক্ষার্থীর চতুর্থ বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকলে আরও ১৪০ টাকা করে দিতে হবে। এছাড়া নৈর্ব্যচনিক বিষয়েও ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকলে বিষয় প্রতি ১৪০ টাকা বাড়তি দিতে হবে। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা এলেঙ্গার সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে শামসুল হক কলেজে ফরম ফিলাপের জন্য অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন অভিভাবকরা।
সরেজমিন সোমবার (২০ জুন) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, কলেজ মাঠে ও অফিস কক্ষে শিক্ষার্থীদের ভিড় রয়েছে। কারো কারো সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ শিক্ষকরা সভা করছেন।
ফরম ফিলাপ করতে আসা লাভনী আক্তার বলেন, শিক্ষকদের অনুরোধ করে মানবিক শাখায় সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে ফরম ফিলাপ করেছি। টাকার ব্যবস্থা করতে তার বাবা মাকে অনেক বেগ পোহাতে হয়েছে।
রানা, সাদিক, খাদেমুলসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষা শাখার জন্য প্রায় দুই হাজার টাকা সরকার নির্ধারিত ফি থাকলেও শিক্ষকরা সাড়ে চার হাজারের নিচে নিচ্ছে না। এছাড়াও বিজ্ঞান বিভাগের জন্য দুই হাজার ৩৩০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও পাঁচ হাজার টাকার নিচে ফরম ফিলাপ করা যাচ্ছে না। কম দিতে চাইলে শিক্ষকরা খারাপ আচরণ করেন। তবে মুখ চেনা প্রভাবশালী নেতার লোকের কাছ থেকে কম নিচ্ছেন শিক্ষকরা।
সাদেকুল, রফিকসহ একাধিক অভিভাবক বলেন, কলেজটি সরকারি। তবে ফরম ফিলাপে জন্য শিক্ষকরা মাথা কাটা ফি আদায় করছে। ঋণ করে ছেলের ফরম ফিলাপ করিয়েছি। টাকা কম দিতে চাইলে শিক্ষকরা মন বেজার করেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
সরকারি শামসুল হক কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নয়া মিয়া বলেন, ফরম ফিলাপে শিক্ষার্থী প্রতি সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা আদায় করার জন্য কালিহাতীর ইউএনওর কাছ থেকে রেজুলেশন করে এনেছি। ফরম ফিলাপের সময়ই আমরা ইনকাম করে থাকি।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুসেইন বলেন, ফরম ফিলাপের রেজুলেশন করে দিয়েছি বলে আমার মনে পড়ছে না। তবে রশিদ ছাড়া টাকা আদায় করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি) শরিফুল ইসলাম বলেন, সরকারি কলেজে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২২
আরএ