রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের সাবেক সভাপতি মলয় ভৌমিকের কক্ষে তালা লাগানো ও বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তোলার ঘটনায় জড়িত ৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদনের আলোকে মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তারা হলেন- অসিত রায়, আবদুল হালিম প্রামাণিক ও মাফরুহা হোসেন।
অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ (আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ) দেওয়া হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষকরা নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের তৎকালীন সভাপতি মলয় ভৌমিকের পদত্যাগের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে সপ্তাহব্যাপী আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন।
এ ঘটনা তদন্ত করতে গত বছরের ৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের (আইবিএসসি) পরিচালক খালেকুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটি তদন্ত শেষে ২৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
ওই তদন্ত প্রতিবেদনসহ সুপারিশমালা মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষকেরা তৎকালীন বিভাগীয় সভাপতি মলয় ভৌমিকের কক্ষে তালা লাগান। ’
ওই বিভাগের শিক্ষকেরা যে ১৫টি অভিযোগ এনে তৎকালীন সভাপতির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন, সেসব অভিযোগের একটিও তদন্তে প্রমাণিত হয়নি।
বিভাগের শিক্ষক অসিত রায়, আবদুল হালিম প্রামাণিক এবং মাফরুহা হোসেন সভাপতির কক্ষে তালা লাগানোর ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের বাইরেও ২ জন শিক্ষক ইন্ধন জুগিয়ে ওই আন্দোলনকে উসকে দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে আন্দোলনকারী সব শিক্ষককে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটির ওই প্রতিবেদন সিন্ডিকেট সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ’
নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের তৎকালীন সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মলয় ভৌমিক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাকে হেঁয় প্রতিপন্ন করাসহ বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তুলতেই পরিকল্পিতভাবে ওইসব ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। ’
তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩১ মার্চ নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষকরা তৎকালীন বিভাগীয় সভাপতি মলয় ভৌমিকের বিরুদ্ধে ১৫ দফা অভিযোগ এনে তার কক্ষে তালা লাগান।
এজন্য তারা ক্যাম্পাসে সপ্তাহব্যাপী আন্দোলনও করেন। এক পর্যায় তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক মলয় ভৌমিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, ২১ মার্চ ২০১২
প্রতিবেদন: জনাব আলী, সম্পাদনা: শাফিক নেওয়াজ সোহান, নিউজরুম এডিটর/আশিস বিশ্বাস, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর