ঢাকা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে ইসি সচিবালয়ে কর্মরতদের প্রথমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) প্রশিক্ষণের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেছে। আগামী ২৬ জুলাই ইনস্টিটিউটে দুটি ব্যাচে দিনব্যাপী এই ‘কোর ট্রেইনার’ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি ব্যাচে ২৫ জন করে মোট ৫০ জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
সংসদ নির্বাচনের তফসিল আগামী নভেম্বরের প্রথমার্ধে ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।
গত ১৬ আগস্ট ভোটকেন্দ্রের খসড়া প্রকাশ করে ইসি। এবার ৪২ হাজার ৪০০টির মতো ভোটকেন্দ্র হতে পারে। আর ভোটকক্ষ হতে পারে দুই লাখ ৬১ হাজার ৫০০টি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরপরই শুরু হবে ব্যাপক আকারে প্রশিক্ষণের কর্মযজ্ঞ। ১৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রকাশ করবে ইসি। এদিকে ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশের পরপর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের দিকে মনোযোগ দেবে সংস্থাটি। আর তা সামনে রেখেই আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধেই শুরু হতে পারে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। এরপর ভোটের ১৫ দিন আগে হতে পারে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ।
এ বিষয়ে ইটিআই মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞে ইসি সচিবালয়ের সব কর্মকর্তাই সম্পৃক্ত হয়ে পড়বেন। এক্ষেত্রে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন, বিধি ও কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে সবাই সমানভাবে অবগত নন। তাই নির্বাচনের মূল কাজ শুরু হলে কাজের গতি যেন বাড়ে, সেই জন্যই প্রথমে এই কোর ট্রেনিংয়ের আয়োজন করা হচ্ছে। এতে মূলত অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন অন্যদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, দুটি ব্যাচে ২৫ জন করে ৫০ জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাকে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। এতে মূলত উপ-সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।
তিনি বলেন, এবার সংসদ নির্বাচনে ৯ লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন পড়বে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে। প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সেপ্টেম্বরের শুরুতেই এবং বড় পরিসরে প্রশিক্ষণ ভোটের ১৫দিন আগে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সাংবাদিক নীতিমালা, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন, নির্বাচনী বিধিমালা সংশোধনের মতো আইনি সংস্কার করেছে। এক্ষেত্রে আগের অনেক কিছুর সঙ্গেই এবার নির্বাচনী কার্যপদ্ধতিতে কিছুটা ভিন্নতা আসবে। এজন্য এই বিষয়গুলোই প্রশিক্ষণে গুরুত্ব পাবে।
প্রশিক্ষক তৈরির ক্ষেত্রে ইটিআই মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান জানান, সরকারের অন্য কোনো দপ্তরের কর্মকর্তাদের আনার কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের। এক্ষেত্রে কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই প্রশিক্ষকের কাজ করবেন। অন্য কর্মকর্তারা পরবর্তী সময়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন।
নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা তথা প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার হিসেবে স্কুল-কলেজের শিক্ষক, ব্যাংকারসহ সরকারের অন্যান্য দপ্তরের মাঠ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কর্মকর্তাদের তালিকা নিয়ে তাদের নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োগ দেয় ইসি। আর ভোটের দায়িত্ব পালনকালে তারা ইসির কর্মকর্তা হিসেবেই ভূমিকা পালন করতে বাধ্য থাকেন।
সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে সরকারের উপ-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। আর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইসির আঞ্চলিক, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। তবে এবার রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদেরও নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২৩
ইইউডি/আরএইচ