লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণা করার আগ মুর্হর্তে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফোন পেয়ে প্রচারিত ও ঘোষিত ফলাফল পরিবর্তন করে জয়ীকে ব্যক্তিকে পরাজিত আর পরাজিতকে বিজয়ী ঘোষণা করার অভিযোগ তুলেছেন প্রার্থীরা।
বুধবার (২২ মে) দুপুরে কালীগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তোলেন টিউবওয়েল প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবির হোসেন চৌধুরী।
ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবির হোসেন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে টিউবয়েল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক আবির হোসেন চৌধুরী। মঙ্গলবার রাতে ভোট গণনা শেষে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কন্ট্রোল রুমে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
সেখানে চূড়ান্ত ফলাফলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কালীগঞ্জ ইউএনও জহির ইমাম প্রচার মাইকে নির্বাচনী চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন। সেই ফলাফলে ভাইস চেয়ারম্যান পদে টিউবয়েল প্রতীকে ১২ হাজার ৮শ ভোট পেয়ে আবির হোসেন চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেবদাস কুমার রায় বৈদ্যুতিক বাল্ব প্রতীকে প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয় ১২ হাজার ৭৩০ ভোট। ঘোষিত এ ফলাফল সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত শিটও গণমাধ্যমকর্মীসহ উপস্থিতদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
চূড়ান্ত ফলাফলের সেই শিটটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী প্রার্থী আবির হোসেন চৌধুরীর হাতে হস্তান্তর করার পূর্ব মুহূর্তে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ফোন আসে। তখন ফলাফল শিট হস্তান্তর স্থগিত করেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম। এর কয়েক ঘণ্টা পরে সেই ভাইস চেয়ারম্যান পদে পরাজিত প্রার্থীকে বিজয়ী এবং জয়ী প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা।
পরে ঘোষিত ফলাফলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দাবি করেছেন, ১২ হাজার ৯৪৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন দেবদাস কুমার রায় (বৈদ্যুতিক বাল্ব) এবং তার নিকটতম প্রার্থী টিউবওয়েল প্রতীকে পেয়েছেন ১২ হাজার ৯০৫ ভোট। আগের শিটে প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হিসাব দেখানো হয় ২১ শতাংশ এবং পরের শিটে দেখানো হয় ২১.১৩ শতাংশ।
একই সঙ্গে চেয়ারম্যানের ভোটের সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান পদের ভোটে বেশ গরমিল উঠে আসে। ৬০৯ ভোটের গরমিল ছিল। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ওপরের ফোনের জোরে জনগণের রায়কে পাল্টে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন আবির হোসেন চৌধুরী।
এমন খবরে আবির হোসেন চৌধুরীর কর্মী সমর্থকরা ফলাফল পরিবর্তনের প্রতিবাদ জানিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে ১৫/২০ জন আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ফলাফল শিট পরিবর্তন করার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে এবং এ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানান আবির হোসেন চৌধুরী।
অপরদিকে ঘোষিত ফলাফল পরিবর্তনের প্রতিবাদে এবং প্রথমে ঘোষিত ফলাফল বহাল রাখার দাবিতে বুধবার বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলা সদরের চৌধুরী মোড়ে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক আনিচুর রহমান আনিচ, কর্মী ছপিয়ার রহমান প্রমুখ।
এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চাচাকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন লালমনিরহাট ২ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২৪
আরএ