ঢাকা: একাধিক ধাপে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্য ব্যক্তিগত অভিমত। আইনে যা আছে কমিশনকে সেভাবেই নির্বাচন করতে হবে।
সোমবার (৩ জুন) নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন। এর আগে রোববার (২ জুন) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সঙ্গে বৈঠকের পর সিইসি ধাপে ধাপে নির্বাচন হলে তা আরও গ্রহণযোগ্য ও ভালো হবে বলে মন্তব্য করেন।
মো. আলমগীর বলেন, কমিশন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আমাদের বক্তব্য হলো- পদ্ধতি যেটাই হোক না কেন, পদ্ধতি ঠিক করবেন রাজনৈতিক দল, সংসদ, ভোটার তারাই ঠিক করবেন। যে পদ্ধতিই অনুসরণ করা হোক না কেন, সংবিধানে যে অবস্থা থাকবে, সেই অবস্থার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নির্বাচনটা সুষ্ঠু করার। এটা নিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দ নাই।
কমিশনের একজন মাথা যখন চিন্তা করে ধাপে ধাপে জাতীয় নির্বাচন হলে ভোটটা ভালো হবে, কেন মনে হলো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওইটা হলো কমিশনের কোনো সিদ্ধান্ত হিসেবে বলেননি উনি। উনি যেটা বলেছেন সেটা হলো যে, একাডেমিক ডিসকাশনের ক্ষেত্রে উনি মনে করেন সেইটা। এ রকম সিদ্ধান্ত দেয়নি যে কমিশন মনে করে এ পদ্ধতিটা ভালো। সেটি ব্যক্তিগত আলোচনা।
ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বাড়ানো নিয়ে সিইসির বক্তব্যের বিষয়ে সরকারের সাবেক এ সচিব বলেন, সিদ্ধান্ত নয়, ইভিএমের ভালো দিকগুলো নিয়ে ব্যক্তিগত আলোচনা হয়েছে যে, ইভিএমে বিশ্বাস করা উচিত কারণ ইভিএমে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে নির্বাচন হওয়ার পরে কিন্তু কোনো প্রার্থী বলেনি নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। এ ধরনের একটি অভিযোগও আমরা পাইনি। সব রাজনৈতিক দল যদি ইভিএমের ভোটের বিষয়টি সমর্থন করতো তাহলে ভালো হতো সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধাপে ধাপে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা আছে কি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো পছন্দ-অপছন্দের বিষয় নয়। এটা হলো জাতীয় সংসদ, দেশের রাজনৈতিক দল যে, পদ্ধতি নির্ধারণ করবে। কমিশন সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্বাচন করবে। কমিশন কোনো গাইডলাইন দিতে পারে না, সুপারিশ করতে পারে না। বরং সংবিধানে কি আছে, সে অনুযায়ী কমিশনকে ফলো করতে হবে। সংবিধান রচনা করবেন মহান জাতীয় সংসদ। মহান জাতীয় সংসদে কারা আছেন? সংসদ সদস্যরা। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাই ঠিক করে দেবেন যে, এ দেশের শাসন ব্যবস্থা কেমন হবে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কেমন হবে, সরকার ব্যবস্থা কেমন হবে, নির্বাচন ব্যবস্থা কেমন হবে।
একজন সংসদ সদস্যের যদি সাধারণ মৃত্য কিংবা অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে তাহলে সেই ক্ষেত্রে ওই আসনে কি হবে, এটি কি সংবিধানের কোথাও উল্লেখ করা আছে- জানতে চাইলে মো. আলমগীর বলেন, সংবিধানের ৬৬ বা ৬৭তে এ বিষয়ে আমরা কোনো কিছু উল্লেখ দেখি না। মৃত্যুজনিত কারণে সংসদ সদস্য পদ শূন্য হবে এটি আমি এ পর্যন্ত সংবিধানে দেখিনি। সাধারণত এটি ধরে নেওয়া হয়, যদি সংসদ সদস্য মৃত্যুবরণ করেন তার পক্ষে তো আর সংসদে আসা সম্ভব নয়। এটি ধরে নিয়েই আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয় এবং আমাদেরকে যখন জানানো হয়, আমরা সংবিধানের ১২৩ অনুযায়ী নির্বাচন করি।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের ক্ষেত্রে কি হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন- স্বাভাবিক বা অপমৃত্যু যাই হোক না কেন এটা হলো সংসদের দায়িত্ব। স্পিকার যখন মৃত্যু সনদ পাবেন তখন সংসদ আসনটি শূন্য ঘোষণা করবে। শূন্য ঘোষণা করলে গেজেট আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবে। এরপরে আমরা নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো।
সংসদ সদস্যের মৃত্যুর কারণে আসন শূন্য হবে এটি সংবিধানে উল্লেখ নেই কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কেন উল্লেখ করা হয়নি এটি তো আমি বলতে পারবো না। সংসদ সচিব সাহেবকে জিজ্ঞাসা করবেন, ওখানে যারা সংসদ সদস্যরা আছেন, উনারা বললে বলতে পারেন।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনারের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উনি মারা গেছেন কি, মারা যাননি সেটি তো আমরা জানি না। আমরা অফিসিয়ালি জানি না। এটি সংসদ থেকে গেজেট করে যখন জানাবে তখন আমরা জানতে পারবো। উনি মারা গেছেন কি না। সংসদ যদি আসনটি শূন্য ঘোষণা করে তখন আমরা নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো।
সবকিছু স্পষ্ট করে লেখা না থাকলে যে কাজ করা যাবে না তাতো নয়। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত গেজেট না পাবো, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা নির্বাচন করতে পারবো না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২৪
ইইউডি/আরআইএস