ঢাকা: রাজনৈতিক দলসহ সবার মতামত নেবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আগে আমরা বক্তা ছিলাম, এখন শ্রোতা।
বুধবার (০৯ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সংস্কার কমিশনের প্রধান। এ সময় নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিমসহ সংস্কার কমিশনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত আইনকানুন, বিধিবিধান সবকিছু আমরা পর্যালোচনা করব, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের সহায়ক হয়। আমরা চাই, নতুন করে শুরু করতে। এখানকার যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, তাদেরও আমি বলেছি, অতীতে যা ঘটেছে, তা অতীত। আমরা একটা নতুন সম্পর্ক, সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলব, যাতে আমরা সবাই মিলে একটা নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করতে পারি, যা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারব। একইসাথে জাতি চিরদিন মনে রাখবে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করার চেষ্টা করব, যাতে ভবিষ্যতে যারাই এখানে আসুক, তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। মূলত বাংলাদেশের মালিক এ দেশের নাগরিক। ফলে, দেশের সব মানুষের দায়বদ্ধতা তাদের কাছে। বিভিন্ন কারণে অতীতে হয়ে ওঠেনি, ভবিষ্যতে যাতে ভালোকিছু হয়, সে ব্যাপারে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব।
কোনো সংলাপ করার চিন্তা আছে কি না, এমন প্রশ্নে সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলের মতামত নেব, তাদের প্রস্তাব নেব। বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমরা সবার সুপারিশ নেওয়ার চেষ্টা করব। রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে আমরা কীভাবে মতামত নেব, তা আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করব।
তিনি বলেন, আমরা যেটা করব... নির্বাচনের সঙ্গে সংবিধান যুক্ত আছে, অনেকগুলো আইন যুক্ত আছে, বিধিবিধান যুক্ত আছে, সংবিধানে নির্বাচন সংক্রান্ত যেসব বিধিবিধান আছে সেগুলো পর্যালোচনা করব। পরে এইসব বিষয়ে কী করা যায়, তা আমরা সুপারিশ করব।
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, আমাদের বড় কাজ জাতীয় নির্বাচনের আরপিওসহ অনেকগুলো আইন পর্যালোচনা করব। প্রত্যেক বাক্য আমরা পর্যালোচনা করব, মূল্যায়ন করার চেষ্টা করব, ওইখানে কোনো পরিবর্তন করার প্রয়োজন আছে কি না। তারপরেও নির্বাচনের ব্যাপারে অনেকগুলো ফরম আছে, এইগুলো আমরা খতিয়ে দেখব, কোনো পরিবর্তন করার প্রয়োজন আছেন কি না। সবচেয়ে শুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো নির্বাচন কমিশন। এরসাথে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে নিরপেক্ষ কার্যকরী করা যায়, এই বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা আপনাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু সুপারিশ করব।
এই নির্বাচন বিশ্লেষক বলেন, আমাদের বড় ইস্যু হলো প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার অধিকার ও ভোটের অধিকার নিয়ে কী করা যায়, এই বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখব। আমাদের যে টেকনোলজি এক্সপার্ট আছে, খতিয়ে দেখবে। অন্যদেরও সহায়তা নেব। নির্বাচন ব্যবস্থায় নারীর অংশগ্রহণ ও জাতীয় নির্বাচনে যে সংরক্ষিত আসন আছে, স্থানীয় নির্বাচনে যে রিজার্ভ সিট আছে, এসব বিষয় নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করব।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা অতীতের নির্বাচনগুলো খতিয়ে দেখার চেষ্টা করব। তার থেকে শিক্ষাগ্রহণ করার চেষ্টা করব এবং আমরা পার্শ্ববর্তী দেশের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চেষ্টা করব। সব অংশীজনের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করার চেষ্টা করব। এর পরে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দেব। এইগুলো আমরা প্রাথমিকভাবে চিন্তা করেছি।
তিনি বলেন, এই কমিশনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের বার বার করে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই কমিশনের কাজের ওপর পরবর্তীতে নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি হবে ও নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। আমরা মনে করি, এটা আমাদের ওপর পবিত্র দায়িত্ব। এই কমিশনের মাধ্যমে এই নির্বাচন ব্যবস্থা একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে আগামীতে একটি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্ব। এই দায়িত্বটা সততার সাথে আন্তরিকতার সাথে যাতে শহীদদের রক্তের ঋণ আমরা শোধ করতে পারি, সেই লক্ষ্যে আমরা সর্বোশক্তি নিয়োগ করব। আপনাদের সবার সহায়তা লাগবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২৪
ইইউডি/এমজেএফ