তাদেরই একজনের অটোরিকশার যাত্রী হতেই রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশ চোখে পড়লো।
শীতের সকালে কুয়াশায় ঢাকা রংপুর নগরের রাস্তা ধরে চলছে অটোরিকশা।
এবার ভোটের খবরা-খবর কি- প্রসঙ্গ টানতেই অটোরিকশা চালক হাসানের জবাব, ‘ভালো। এই তো কাইল দিন বাদ পরশু’।
ভোটের সময় যতো ঘনিয়ে আসছে, ততোই যেন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছেন এই চালক। ঢাকার বিক্রমপুরের হাসান ১৭ বছর ধরে রংপুরে থাকেন, শালবন এলাকায় তার বাস।
দিনভর ভাড়া টেনে মানুষের সঙ্গে কথা বলে, আলোচনা শুনে ভোটের বাজার বা ফলাফল কি হবে, তার হিসাব-নিকাশ কষতে শুরু করে ফলাফলও বের করে ফেলেছেন তিনি।
‘এবার লাঙ্গল! একবার তো ঝণ্টু আছিলো। ওরা তো মানুষের কথায় শোনে না। খালি হামার কথা না, তোমরা আরো মানুষের মুখোত শোনেন। মানুষ তো বদলি চায়। কথাটা, ভোটের পর বোঝবেন’।
এভাবেই সহজ-সরল ভঙ্গিতে মনের কথাগুলো বলে জাহাজ কোম্পানির মোড় হয়ে খানিক দূরে হোটেল নর্থ ভিউ’র সামনে দাঁড়ালেন চালক।
আগামী বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মেয়র পদে তিন প্রধান দলের তিন প্রার্থীর মধ্যে তুমুল ভোটযুদ্ধ হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়া এ সিটিতে ওই তিন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হচ্ছেন- আওয়ামী লীগের সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু (নৌকা), জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা (লাঙ্গল) ও বিএনপির কাওছার জামান বাবলা (ধানের শীষ)।
তারা ছাড়াও ভোটের লড়াইয়ে আছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আব্দুল কুদ্দুছ (মই), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এ টি এম গোলাম মোস্তফা (হাতপাখা) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সেলিম আখতার (আম) এবং জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার (হাতি)।
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হোটেলের সামনে থেকে বের হয়ে ব্যাটারিচালিত যান্ত্রিক রিকশায় শহর ঘুরতে ঘুরতে চালক ফজলুর রহমানের মুখেও সেই নির্বাচনের প্রসঙ্গই।
সিটি কর্পোরেশনের ভোটার নন তিনি। বদরগঞ্জ উপজেলার ওসমানপুরে তার বাড়ি। জীবিকার তাগিদেই শহরে থাকছেন।
মূল লড়াইটা লাঙ্গল, নৌকা ও ধানের শীষে হবে- সে কথা জোর গলায় শুনিয়ে ফজলু বললেন, ‘আমিও আওয়ামী লীগ করি। কিন্তু ভোটটা এবার বেশি পাবে লাঙ্গল। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের নিজের এলাকা বলেই আমার এই ধারণা’।
‘এটে এরশাদের বাড়ি। এরশাদ এবার জোর দেছে। আর মানুষ খালি লাঙ্গল লাঙ্গল করোচে’।
তবে এ ধারণা জোর দিয়ে করলেও ভোটের পর পর্যন্ত কি হয়, সেটিও মাথায় রাখছেন ফজলু।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় ক্ষমতায় থাকা নিয়ে অন্য ধরনের হিসাব-নিকাশ করছেন গনেশপুরের মিজানুর রহমান। বললেন, ‘আওয়ামী লীগ জেতার জন্য অনেক চেষ্টা করছে। কারণ এবার জিতলে জাতীয় নির্বাচনও একটি ফ্যাক্টর’।
‘দলের প্রার্থী ঝণ্টু জিতে গেলে রংপুরের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে- সেজন্য কিছু ভোটার তার কথাই বিবেচনা করবেন। কারণ, জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিতলে আর না জিতলে একই কথা’।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
এমআইএইচ/এএসআর
** শীতে জবুথবু রংপুরের ভোটের সকাল