ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

যেখানে নির্বাচনী হিসাব ‘জাতীয় বনাম আঞ্চলিক’

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮
যেখানে নির্বাচনী হিসাব ‘জাতীয় বনাম আঞ্চলিক’ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, শহীদুল ইসলাম ভূইয়া, নতুন কুমার চাকমা

খাগড়াছড়ি: দেশের অন্যান্য জেলার থেকে পার্বত্য এলাকা হিসাব-নিকাশে সব সময় আলাদা। আর সেটি যদি হয় আসন্ন নির্বাচনের হিসাব, তাহলে তো সেটা কঠিনই বটে! অন্য জেলাগুলোতে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে লড়াই হলেও এখানে আছে পাহাড়ে আঞ্চলিক দল সমর্থিত প্রার্থী।

যারা বিগত নির্বাচনগুলোতে জয়ী হতে না পারলেও নির্বাচিত প্রার্থীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছে। বড় ধরনের ফ্যাক্টর হয়েছে ভোটের হিসাবে।


 
হাতে বাকি তিন দিন। এরপরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী যেমন রয়েছে তেমনি আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। এবার খাগড়াছড়ির ২৯৮ নং আসন থেকে লড়ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন ও ইউপিডিএফের ৫ নেতা।
 
আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বিএনপি থেকে ধানের শীষে লড়ছেন শহীদুল ইসলাম ভূইয়া, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে লড়ছেন সোলায়মান আলম শেঠ, ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকে লড়ছেন আব্দুল জব্বার গাজী এবং একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউপিডিএফ সমর্থিত নতুন কুমার চাকমা লড়ছেন সিংহ প্রতীকে।

এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় উত্তাপ রয়েছে বেশ। শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। সমানতালে প্রচারণা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
 
তবে শেষ পর্যন্ত লড়াই হবে তিন প্রার্থীর মধ্যে। তারা হলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বিএনপি প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ভূইয়া এবং ইউপিডিএফ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নতুন কুমার চাকমা।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণা দৃশ্যমান হলেও ইউপিডিএফ প্রার্থীর অনেকটা অদৃশ্য। বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, পাড়া প্রধান ও হেডম্যানদের ডেকে এলাকার ভোট নিশ্চিত করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা।
 
এদিকে প্রচারণায় বাধা, নেতাকর্মীদের উপর হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের অভিযোগ তুলে বেশ কয়েক বার প্রেস ব্রিফিং করেছেন বিএনপি প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ভূইয়া। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরে হামলা চালাচ্ছে, মামলা, ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। প্রশাসনকে বলেও লাভ হচ্ছেনা। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে কিছু নেই। তারপরও জনগণের উপর আস্থা রেখে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
 
আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ‘গত ১০ বছরে খাগড়াছড়িতে অভূতপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সবক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে। ভবিষ্যতে শান্তিও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নৌকার বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের উপর ভরসা নেই বলে বিএনপি নানা অভিযোগ করছে।
 
অপর দিকে নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির কপালে বারে বারে ভাঁজ ফেলেছে আঞ্চলিক দলের প্রার্থীরা। মূলত খাগড়াছড়িতে আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ জাতীয় রাজনীতি থেকে জীবনযাত্রায় সবখানে বড় ফ্যাক্টর। অভিযোগ রয়েছে, প্রত্যন্ত এলাকায় দলটির সশস্ত্র আধিপত্যের কারণে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ভোট ব্যাংক নিজেদের পক্ষে নিতে সক্ষম হওয়ায় অতীতে শক্ত অবস্থান দেখাতে সক্ষম হয় সংগঠনটির স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ কারণে প্রত্যন্ত এলাকার ভোটগুলো জাতীয় রাজনীতির পক্ষে খুব বেশি পড়েনি।
 
বিজয়ী প্রার্থীর সঙ্গে দলটির প্রার্থী শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকে। তবে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর তুলনায় জেলা উপজেলা শহরে ভোটার বেশি। যেখানে দলটির প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। এদিকে ইউপিডিএফ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নতুন কুমার চাকমার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
 
এবার খাগড়াছড়িতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪১ হাজার ৮৪৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৩৬ এবং মহিলা ২ লাখ ১৫ হাজার ৩০৭ জন। ৯ উপজেলা ও ৩ পৌরসভা নিয়ে খাগড়াছড়ি একটি সংসদীয় আসন। মোট ১৮৭টি ভোট কেন্দ্র। এরমধ্যে ৩টি দুর্গম কেন্দ্রে হেলিকপ্টার ব্যবহৃত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮
এডি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।