একটি মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন আমান উল্লাহ। তিনিও সনদ অনুযায়ীই নিয়োগ পেয়েছেন।
আনোয়ারা বেগমের স্বামী আলম খান সম্প্রতি মারা গেছেন। এখন সরকারি চাকরিজীবী স্বামীর পেনশনের সুবিধা তার নামে স্থানান্তর করতে গিয়ে পড়েছেন এই ‘নাম বিভ্রাটে’। তার স্বামীর নামের বানানে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এ ধরনের সমস্যা নিয়ে প্রতিদিনই ইকবাল, আমান আর আনোয়ারাদের মতো ভুক্তভোগীরা নির্বাচন কমিশনের দারস্থ হচ্ছেন। আর নির্বাচন কমিশন সনদ বা সার্ভিস বুক দেখে সমস্যাপড়া জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিক করে দিচ্ছে। কিন্তু এর স্থায়ী সমাধানও প্রয়োজন।
তাই নির্বাচন কমিশন মনে করছে, নিয়োগের সময় এনআইডি অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।
এক্ষেত্রে এনআইডিতে কারো নামের বানান বা অন্যান্য তথ্য যদি শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের সঙ্গে মিল না থাকে, তাহলে নিয়োগের আগেই প্রার্থীরা তা সংশোধন করে নেবেন। এতে ভবিষ্যতের ঝামেলা এড়িয়ে যেতে পারবেন।
এমন ভাবনা থেকেই নির্বাচন কমিশন সরকারকে একটি নির্দেশনা দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে- নিয়োগের সময় এনআইডির তথ্যাদি বিশেষ করে নিজ নাম, বাবার নাম, জন্ম তারিখ এবং নিজ জেলা আমলে নিয়ে নিয়োগ দেওয়ার জন্য।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ওই নির্দেশনা দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ সংক্রান্ত একটি আধা সরকারি পত্রও (ডিও লেটার) দিয়েছেন মন্ত্রণালয়টির সচিবকে।
এতে বলা হয়েছে- আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন যে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দফতর কর্তৃক চাকরিপ্রত্যাশীদের চাকরি প্রদান করা হলেও চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যথাযথ তথ্য প্রদান করা হয়েছে কি না প্রায়ই তা নিশ্চিত করা হয় না। অনেক সময় এনআইডিতে লিপিবদ্ধ তথ্যাদি লক্ষ্য করা হয় না বা এনআইডি নেওয়া হলেও তার সঠিকতা যাচাই করা হয় না। ‘চাকরি বেতন ও ভাতাদি আদেশ-২০১৫’ এর ৩৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন নির্ধারণ/বেতন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এনআইডি’র তথ্যাদির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে চাকরি পাওয়ার পর ‘পে ফিক্সেশন’ সংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরা এনআইডি অনুবিভাগের দারস্থ হলে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এর আগে নির্বাচন কমিশন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নিয়োগের সময় এনআইডি অনুযায়ী তথ্য আমলে নিয়ে নিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দফতর ওই নির্দেশনা প্রতিপালন করে না মর্মে বিবেচিত হয়।
তাই ইসি সচিব তার ডিও লেটারে জনপ্রশাসন সচিবকে এনআইডি’র তথ্য আমলে নিয়ে চাকরি ও অন্যান্য সেবা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন।
দেশে বর্তমানে সাড়ে দশ কোটির মতো ভোটার রয়েছেন। এদের মধ্যে এনআইডিতে কোনো না কোনো ভুল রয়েছে বা সনদের সঙ্গে তথ্যের মিল নেই, এমন ভোটারের সংখ্যা দুই কোটির মতো।
২০১৫ সালে এনআইডির ভিত্তিতে বেতন দেওয়ার বিধান আনা হলে সে সময় এনআইডি সংশোধনের হিড়িক পড়ে যায়। ২০১৬ সালের জানুয়ারি নাগদ এক লাখের বেশি সরকারি চাকরিজীবী এনআইডি সংশোধনের আবেদন করেন। সেই সমস্যা এখনো রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান বলেন, সমস্যার গোড়াতেই সমাধান করা উচিত। কারো এনআইডির তথ্য সনদের সঙ্গে মিল না থাকলে, আমরা সনদ কিংবা সার্ভিস বুক অনুযায়ী এনআইডি সংশোধন করে দিই। তাই চাকরিপ্রত্যাশীর উচিত নিয়োগ পাওয়ার আগেই এনআইডি সনদ অনুযায়ী সংশোধন করে নেওয়া। আর সরকার বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যদি এনআইডি অনুযায়ী, নিয়োগের বিষয়টি কার্যকর করে, তবে চাকরি প্রার্থীরা আগেই সমস্যা সমাধানে আগ্রহী হবেন। তাই এমন নির্দেশনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
ইইউডি/জেডএস