১ মার্চ, জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে শুক্রবার বিকেলে নির্বাচন ভবনে তিনি এ তাগিদ দেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সভায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মো. সাদিক, সাবেক সিইসি রকিবউদ্দীন আহমদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, বর্তমান চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রি. জে. সাইদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি লোক প্রবাসে অবস্থান করে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু এদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই। প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিরা যাতে এনআইডি পেতে পারেন, তার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এটা সম্ভব হলে প্রবাসীদের নাগরিকত্বসহ তাদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পেতে সহজ হবে। এছাড়া প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবিও ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। প্রবাসে অবস্থান করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ পৃথিবীর প্রায় ১২০টি দেশের প্রবাসী নাগরিকরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও যাতে এনআইডিসহ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পান, সে বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বায়োমেট্রিক ফিচারযুক্ত এনআইডি ডেটাবেজে সব ভোটারের আঙুলের ছাপ এবং চোখের করণীকার প্রতিচ্ছবি গ্রহণ করা হয়েছে। আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, নির্বাচন ব্যবস্থায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটার তালিকভুক্তকরণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে। ভোটার তালিকার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতন করে তুলতে হবে। ভোটাররা যত বেশি সচেতন হবে, নির্বাচনও ততো সুষ্ঠু হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, উন্নয়নের জন্য দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প নেই। তাই তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে হবে। নেতৃত্ব নির্বাচনে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হচ্ছে ভোট। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হলেও নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে দলমত নির্বিশেষে সবাইকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে ভোটারদের। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় ভোটার দিবস পালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ দিবসটিকে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তৃণমূল পর্যায়ে যথাযথভাবে পালন করা হলে দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক সাড়া পড়বে।
তিনি বলেন, দেশের সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এ লক্ষ্যে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। তাহলেই দোষারোপের রাজনীতির পরিবর্তে শান্তি, সৌহার্দ্য, সহমর্মিতার মতো সহিষ্ণুতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধসহ সমগ্র জাতীয় জীবনে গুরুত্ববহ মার্চ মাসের ১ তারিখে জাতীয় ভোটার দিবস পালন নিঃসন্দেহে জনগণের জাতীয় সংহতি ও জাতীয়তাবোধের চেতনাজাগ্রত করতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।
বক্তব্যের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জীবন উৎসর্গকারী শহীদ বীরদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
কেএম নূরুল হুদা তার বক্তব্যে প্রবাসীদের ভোটার করার বিষয়টি তুলে ধরেন বলেন, প্রবাসীদের বিদেশেই ভোটার করে নিয়ে সেখানেই জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে কি করে তাদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, সে উদ্যোগও নেওয়া হবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অবশেষে ধরে আসা গলায়–‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ উচ্চারণ করেই বক্তব্য শেষ করেন।
সিইসি নূরুল হুদা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর ভয়াল থাবাকে স্তব্ধ করে দিতে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
বিকেল ৪টায় জাতীয় সংগীত বাজিয়ে সভার শুরু হয়। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পাঠ করা হয়।
সভায় রাষ্ট্রপতির হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন সিইসি। তারপর সিইকেও সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন রাষ্ট্রপতি। মাঝে ছয়জন নাগরিকের হাতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ স্মার্টকার্ড তুলে দেন।
দেশে প্রথমবারে মতো দিনভর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় ভোটার দিবস উদযাপন করা হয়। স্থানীয় পর্যায়ে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় এবং কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশাসনের সহায়তায় দিবসটি পালন করে নির্বাচন কমিশন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৯
ইইউডি/জেডএস