এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপি নেতারাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করায় ইতোমধ্যেই তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সবমিলে এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। প্রচার-প্রচারণার দিক দিয়েও এগিয়ে রয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। তবে তাদের জয়ের পথে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এ ক্ষেত্রে জয়ের পথে সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপির প্রার্থীদের তেমন একটা সমস্যা মনে করছেন না নৌকার কর্মী-সমর্থকরা।
চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়ের পথে বিদ্রোহীদের বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করছেন দলটির কর্মী-সমর্থকরা। দলের একাধিক কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে কথা হলে উঠে আসে এমনই সব তথ্য। তবে ব্যাপারটি নিয়ে দলটির জেলার কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
১২টি উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া জেলা। এরমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ইতোমধ্যেই জেলার শেরপুর উপজেলায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু, আদমদীঘি উপজেলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম খান রাজু ও সোনাতলা উপজেলায় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিনহাদুজ্জামান লিটন নির্বাচিত হয়েছেন।
তাই স্বভাবতই চেয়ারম্যান পদে বাকি ৯টি উপজেলায় ভোটের লড়াই হবে। তারমধ্যে ৫টি উপজেলায় নৌকার প্রার্থীদের একইদলের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। এছাড়াও ৭টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতা প্রার্থী হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নন্দীগ্রাম উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হয়ে লড়ছেন রেজাউল আশরাফ জিন্না। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে লড়ছেন একইদলের আজিজার রহমান। কাহালু উপজেলায় আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে লড়ছেন মোশফেকুর রহমান কাজল ও আল হাসিবুল হাসান সুরুজ। ধুনট উপজেলায় আব্দুল হাই খোকনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে লড়ছেন মাসুদুল হক বাচ্চু। দুপচাঁচিয়া উপজেলায় মিজানুর রহমান খান সেলিমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে লড়ছেন ফজলুল হক এবং সারিয়াকান্দি উপজেলায় মুনজিল আলী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে লড়ছেন একইদলের শাজাহান আলী ও আব্দুস সামাদ।
আওয়ামী লীগ কর্মী হায়দার আলী নন্দীগ্রাম উপজেলার ভোটার। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার বাড়িতে তিনজন ভোটার রয়েছে। এখানে প্রার্থী হয়েছেন দুই জন। এদের মধ্যে একজন নৌকার আরেকজন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন। আমিও আওয়ামী লীগ করি। তারাও আমার দলের নেতা। এখন কাকে ভোট দেবো ভাবনায় পড়ে আছি।
আব্দুল জব্বার নামে আওয়ামী লীগের আরেক কর্মী বাংলানিউজকে বলেন, নেতাদের উচিত ছিলো একজনকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রাখা। কিন্তু নেতারা সেটা করেননি বা করতে পারেননি। ফলে বিদ্রোহীরা নির্বাচনী মাঠে থেকে ভোট প্রার্থনা করছেন। নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে লড়ছেন। আর এর সুযোগ নেবেন অন্য প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ সমর্থক আব্দুল হান্নান বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে সব উপজেলায় দলের ভেতরে কর্মী-সমর্থকরা কমবেশি ভাগাভাগি হয়ে পড়েছেন। বেশিরভাগ কর্মী-সমর্থক দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলেও অনেকেই আবার বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়েও কাজ করছেন। এতে ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে। ফলে দলীয় প্রার্থীর জয় পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়বে।
দলটির এসব কর্মী-সমর্থকদের ভাষ্য, চেয়ারম্যান পদে একজন প্রার্থী থাকলে জয় অনেক সহজ হতো। কিন্তু একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় কে জয়লাভ করবেন তা নিশ্চিত করে বলাটা মুশকিল।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী বগুড়ার ১২টি উপজেলায় আগামী ১৮ মার্চ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে জেলার ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ২৮৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৯
এমবিএইচ/এমজেএফ