শনিবার (০৯ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে ভোটগ্রহণের উপকরণ পাঠানো হচ্ছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে। একই সময় থেকে উপজেলা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়ন করা হচ্ছে।
রাজশাহীর আট উপজেলায় এবার ৫২২টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে জেলা পুলিশের আওতায় রয়েছে ৫১০টি ভোটকেন্দ্র। বাকি ১২টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে মহানগর পুলিশের আওতাধীন এলাকায়। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে জেলার পবা উপজেলায় এবার ভোটগ্রহণ হচ্ছে না। বাকি আট উপজেলায় রোববার একযোগে ভোট দেবেন ভোটাররা।
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক খান জানান, ভোটের দিন উপজেলার কেন্দ্রে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। এতে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা পুলিশের দুই হাজার সদস্য। ভোটগ্রহণ হবে জেলার আট উপজেলায় ৫১০ কেন্দ্রে।
এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) ভোটকেন্দ্র ধরা হয়েছে ২০৬টি। বাকি ৩০৪টি কেন্দ্র সাধারণ ধরে নিরাপত্তা ছক তৈরি করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ১৫ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্বে থাকবেন বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় এবার ভোটগ্রহণ হবে ৫১টি কেন্দ্রে। এর মধ্যে ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২৩টি সাধারণ ভোটকেন্দ্র রয়েছে। পাশের গোদাগাড়ী উপজেলায় ৯৮ ভোটকেন্দ্রের ৩৬টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৫৮টি ভোটকেন্দ্র সাধারণ। মোহনপুর উপজেলায় ২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২১টি সাধারণ মিলিয়ে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪৪টি।
বাগমারা উপজেলায় সর্বাধিক ১০৬টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। এর মধ্যে ২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৭৯টি সাধারণ ভোটকেন্দ্র। দুর্গাপুরের ৫৩ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৫টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৩৮টি সাধারণ ভোটকেন্দ্র। জেলার পুঠিয়ায় ৫২টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২৯টি সাধারণ ভোটকেন্দ্র রয়েছে।
চারঘাটে ২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২১টি সাধারণ মিলিয়ে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪৪টি। এছাড়া বাঘা উপজেলার ৫৯ ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। এখানকার ২২টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২১টি সাধারণ ধরে নিরাপত্তা কৌশল ঠিক করেছে পুলিশ।
এছাড়া রাজশাহী মহানগর পুলিশের আওতাধীন ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৬টি। এর মধ্যে পুঠিয়ায় ১১টি এবং চারঘাটে ৫টি কেন্দ্র। এগুলোর প্রতিটি ভোটকেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ বলছে নগর পুলিশ। তাই প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্র ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক খান আরও বলেন, প্রত্যেক সাধারণ ভোটকেন্দ্রে একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও একজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে ১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। আর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে কেবল বাড়বে একজন পুলিশ সদস্য।
নির্বাচনে প্রতি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় দু’টি করে মোট ১০৯টি মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করবে। প্রত্যেক থানায় থাকবে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স। প্রস্তুত থাকবে জেলা পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম (কিইউআরটি)। তাছাড়া পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য থাকবে রিজার্ভে। নির্বাচনের দিন মহানগর পুলিশও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
রাজশাহী পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে রাজশাহীর ভোটকেন্দ্রগুলো ঘিরে এবার তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টা থেকেই নেওয়া হচ্ছে বিশেষ এই নিরাপত্তা। নির্বাচনের পরের দিন ভোর ৬টা পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। এরইমধ্যে নির্বাচনে মোতায়েনকৃত পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে জেলা পুলিশ লাইন্স মাঠে বৈঠক করা হয়েছে। এতে শতভাগ নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান পুলিশ সুপার।
রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় জানিয়েছে, এবার জেলার তানোরে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৩ জন, গোদাগাড়ীতে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩ জন, মোহনপুরে এক লাখ ২৯ হাজার ২৪৮ জন, বাগমারায় ২ লাখ ৭৮ হাজার ১৪ জন, পুঠিয়ায় এক লাখ ৬০ হাজার ৭২৪ জন, দুর্গাপুরে এক লাখ ৪১ হাজার ১০৫ জন, চারঘাটে এক লাখ ৫৯ হাজার ৭২৫ জন এবং বাঘায় এক লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
রাজশাহী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে যাবে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে। পরদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। এখন পর্যন্ত নির্বাচন ঘিরে অপ্রীকিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে রোববার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
১০ মার্চ অনুষ্ঠেয় পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজশাহীতে এবার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন মোট ৮৯ জন প্রার্থী। দুই চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১৮ চেয়ারম্যান, ৩১ ভাইস চেয়ারম্যান এবং ২০ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৯
এসএস/জেডএস