ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ম্যাক্সিমাস ট্যাব ব্যবহার, ভোটের ফল প্রকাশে বিলম্ব

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৯
ম্যাক্সিমাস ট্যাব ব্যবহার, ভোটের ফল প্রকাশে বিলম্ব নির্বাচন ভবন

ঢাকা: নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহারের দিক থেকে নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে ট্যাব। দ্রুততার সঙ্গে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তথা ফল প্রকাশের ধোঁয়া তুলে এই যন্ত্র কেনা হলেও ফল হচ্ছে উল্টো। ম্যানুয়্যালি যে সময় লাগছে তার চেয়ে বেশি সময় লাগছে নতুন পদ্ধতিতে। কর্মকর্তারা বলছেন, নিম্নমানের ট্যাব আর সঠিক প্রশিক্ষণ না থাকার কারণেই এমন হচ্ছে।

২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের উপজেলা ভোটে রংপুর সদর, গোপালগঞ্জ সদর, মানিকগঞ্জ সদর ও মেহেরপুর সদর উপজেলার ভোটে ট্যাব ব্যবহার করা হয়। সেখানে ইলেকট্রনিংক ভোটিং মেশিনেও ভোট নেওয়া হয়।

এ ক্ষেত্রে ফল প্রকাশ করার কথা ভোট শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই। কিন্তু এই ট্যাবের মাধ্যমে ফলাফল পাঠাতে গিয়ে সব গোলমাল হয়ে যায়। ফলে ম্যানুয়ালি যেসব উপজেলার ফল প্রকাশ গণনা করে প্রকাশ করা হয়, তার চেয়েও ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় বেশি লেগে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবিষ্যতে সকল স্থানীয় নির্বাচনেই এই ট্যাবে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তথা ফল প্রকাশের লক্ষ্যে এক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। যার আওতায় কেনা হয়েছে ৪২ হাজার ২শ’ ট্যাব। এজন্য ৩৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। এক একটি ট্যাবের দাম পড়ছে ১০ হাজার টাকারও কম। যা সরবরাহ করেছে কম্পিউটার সোর্স লিমিটেড নামে এক প্রতিষ্ঠান।

যে ট্যাব দিয়ে এই ফল ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে, সেটি হচ্ছে ম্যাক্সিমাস টি২ ব্র্যান্ডের ট্যাব। ম্যাক্সিমাস মোবাইল বাংলাদেশে এক সময় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো লাউড স্পিকারের কারণে। আর দামেও কম ছিলো। তবে এটি টেকসই ছিলো না বলে গ্রাহকের মন রাখতে পারেনি। বাজারের এই ব্র্যান্ডের মোবাইল বা ট্যাব এখনো আছে। এগুলো ব্যবহারের তেমন নজির মেলে না।

খোদ ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এখানে টেকসই উপকরণের বিকল্প নেই। এতো অল্প দামের এবং সুনামহীন একটি পণ্য কিনে বরং টাকার অপচয়ই হলো!

গত ২৪ মার্চ ট্যাব ব্যবহার করে যেসব উপজেলার ফল প্রকাশের কথা ছিলো সেগুলোর ফল নির্বাচন কমিশনে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও পাওয়া যায়নি। ইসিতে স্থাপন করা অস্থায়ী কট্রোল রুমে বারবার গিয়ে দায়িত্বরতরা কোনো ফল জানাতে পারেননি।

ট্যাবে ফল প্রকাশের জন্য মূলত পাঁচ ধরনের সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো হলো— ক্রেডিনশিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যার, পোলিং পারসোনাল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, ইলেকশন শিডিউল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, রেজাল্ট কাউন্টিং অ্যান্ড ডিকলেরাশন সিস্টেম ও সিস্টেম ডকুমেন্টশন। আর পুরো প্রক্রিয়াটির জন্য কেনা হয়েছে সার্ভারও।

ট্যাব ব্যবাহারের যে ধারণা পাওয়া গেছে, এতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ভোটের চিত্র (ছবি বা ভিডিও), যে কোনো ধরনের তথ্য পাঠাতে পারেন। কোন কেন্দ্রে কত ভোট পড়লো সে তথ্য গণনার সঙ্গে সঙ্গে সফওয়্যারে ইনপুট দিলে খুব কম সময়েই ফল সমন্বয় হয়ে যায়। যা জমা হয় সার্ভারে। কন্ট্রোল রুম থেকেই খুব সহজেই তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে নির্বাচন কমিশন।

ইসির যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এট অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। তবে এজন্য সঠিক প্রশিক্ষণ ও টেকসই প্রযুক্তি পণ্যের বিকল্প নেই।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ট্যাব চায়না প্রোডাক্ট। তবে কাজ ভালো করে। আর ট্যাবের মাধ্যমে ভোটের ফল ব্যবস্থাপনায় বিলম্ব হওয়ার পেছনে কারণ হতে পারে সঠিক প্রশিক্ষণের অভাব। নতুন প্রযুক্তিতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের অভ্যস্ত হতে একটু সময় তো লাগবেই।

তবে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন ভিন্ন কথা। তার মতে, গত ২৪ মার্চ ইন্টারনেটের ব্যবহার সংশ্লিষ্ট এলাকায় অনেক বেড়ে গিয়েছিলো। তাই ইন্টারনেটের গতি কম ছিলো। সে কারণে ফল প্রকাশে দেরি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৯
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।