ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

মসিক নির্বাচন: কাউন্সিলর পদে তীব্র লড়াই

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৯
মসিক নির্বাচন: কাউন্সিলর পদে তীব্র লড়াই ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা

বহুল প্রতীক্ষিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ ৩৩টি ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ১১টি নারী ওয়ার্ডে ভোটযুদ্ধ হবে আগামী ৫ মে। ভোট হবে ইভিএম পদ্ধতিতে।

মেয়র পদে না হলেও মহানগর মেতেছে কাউন্সিলর নির্বাচনে। ঘনিয়ে আসা ভোট উৎসব, ছড়াচ্ছে উত্তাপ।

এসব নিয়ে ৫ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখেছেন আমাদের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান। আজ পড়ুন ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় কিস্তি।

সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সব কাউন্সিলরের প্রচারকর্মীরা পুরনো জনপ্রিয় বিভিন্ন গানের সুর নকল করে বানানো স্লোগানে ভোটারদের দৃষ্টি কাড়ার চেষ্টা করছেন। প্রার্থীদের প্রচারণায় সকাল-বিকেল মাইকের মাত্রাতিরিক্ত শব্দেও কান ঝালাপালা অবস্থা। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম ভোট হওয়ায় অবশ্য তা নিয়ে তেমন কোনো বিরক্তি নেই নগরবাসীর।

নগরের প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই নির্বাচনী আমেজ। প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আগেভাগেই মেয়র পদটি মীমাংসিত হওয়ায় অনেকেই ভেবেছিলেন নির্বাচনী আমেজই বুঝি শেষ! কিন্তু সূর্যের তেজের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই এখন রীতিমতো মহানগরে শুরু হয়েছে ভোটের উত্তাপ।  

শুধু প্রার্থীদের কর্মী বা সমর্থকরাই নন, দিন গড়াতেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাও। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টিতে নজর রেখেও ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে হানা দিচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ নির্বাচনে সাধারণ ৩৩টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের অবতীর্ণ হতে হয়েছে কঠিন পরীক্ষায়। একই অবস্থা সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর পদেও। এখানেও লড়াই হবে তীব্র।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কাউন্সিলর নির্বাচনকে ঘিরেই ভোটারদের মাঝে চলছে উচ্ছ্বাস। প্রতিটি ওয়ার্ডেই চলছে সরগরম নির্বাচনী প্রচারণা। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছেন ভোটাররা।

ময়মনসিংহ মহানগরের প্রথম নির্বাচনটি হচ্ছে সিটি করপোরেশন ঘোষণার মাত্র ৬ মাসের মাথায়। গত বছর ১৪ অক্টোবর দেশের ১২তম সিটি করপোরেশনটি যাত্রা শুরু করে। এরই মধ্যে দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী প্রাচীন ময়মনসিংহ পৌরসভা এখন কেবলই ইতিহাস।

আর ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ তীরের শহরটি মহানগরে উন্নীত হতে ছড়িয়ে পড়েছে ব্রহ্মপুত্রের উত্তর পাশেও। অর্থাৎ, নদটির দুই পাড়েই বিস্তৃত হয়েছে নতুন মহানগর।

৯১.৩১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তন ও ৪ লাখ ৭১ হাজার ৮শ’ ৫৮ জনসংখ্যার ময়মনসিংহ মহানগরবাসী এ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করেছেন দীর্ঘ সময়।

সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালে। সেই সূত্রে পৌরসভার মেয়াদ শেষ হবার ২ বছর পর নগরে ভোট উৎসব হচ্ছে। বহুল প্রত্যাশিত এ নির্বাচনকে ঘিরে যেমন নাগরিক সমাজের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রত্যাশা তেমনি নির্বাচনে প্রার্থীদের ঘনঘটাও দেখার মতো।

প্রথম সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর হতে প্রার্থীরা আদাজল খেয়ে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। অভিযোগ রয়েছে, অনেক প্রার্থী বস্তা বস্তা টাকা নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার জন্য চেষ্টায় আছেন।

আচরণবিধির কথা মনে রেখেও অনেকে সুকৌশলে টাকার গরম দেখাচ্ছেন। নানাভাবেই যেন টাকা উড়ছে জমজমাট নির্বাচনে।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার অনেক আগে থেকেই সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রাক প্রস্তুতি শুরু করেন। সিটি করপোরেশনের গেজেট প্রকাশিত হয় গত বছরের ১৪ অক্টোবর। মূলত সেদিন থেকেই শুরু হয় নির্বাচনী ডামাডোল।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা নির্বাচনে নামার প্রস্তুতি নেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতাও কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন লাভের মিছিলে শামিল হন।

একই সঙ্গে বিলুপ্ত পৌরসভার ২১ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলররা তো ভোটের মাঠে আছেনই। যাদের দুই-একজন বাদে অন্যরা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত বা অনুসারী।

কোনো কোনো ওয়ার্ডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উভয়ে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন এবং নির্বাচনের মাঠে আছেন।  

দেখা গেছে, ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রার্থীরা দিন-রাত জনসংযোগ, মতবিনিময় সভা, নির্বাচনী বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন। মহানগরের ৩৩ ওয়ার্ডজুড়ে চলছে নির্বাচনী আবহ। কাউন্সিলর পদে এ নির্বাচন যেমন হবে অংশগ্রহণমূলক তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণও।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে কাউন্সিলর হওয়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। রণকৌশলের দিক থেকেও অনেক প্রার্থী জাতীয় নির্বাচনের আদলে নির্বাচনী স্লোগান ও ইশতেহার করে সেখানে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি বইয়ে দিচ্ছেন।

এলাকাভিত্তিক জনগণের মধ্যেও চলছে নির্বাচনী মেরুকরণ। চলছে নানামুখী জল্পনা। সর্বত্রই আলোচনা একটিই কাউন্সিলর পদে লড়াই হবে তীব্র। নির্বাচনে ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সাধারণ ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রত্যেকেই অভিন্ন সুরে বলছেন, নতুন সিটিতে প্রথম ভোট খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে। ভোট নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। ভোটারদের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছেন। বিজয়ী হতে এবং ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নিত্য নতুন স্টাইলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

মসিক নির্বাচন: নতুন মহানগরে ভোটের উচ্ছ্বাস

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৯ 
এমএএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।