উত্তাপহীন এ নির্বাচনী পরিস্থিতির জন্য বিএনপির প্রার্থী রিটা রহমান তার কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে ভোটের আগের রাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হানাকে দায়ী করেছেন। আর এরশাদপুত্র সাদ ইতোমধ্যে তার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বলে বক্তব্য দিয়েছেন গণমাধ্যমে।
এ অবস্থায় ‘নেই কাজ তো খই ভাজ’ পরিস্থিতিতেই যেন পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাই মাছ শিকারে নেমে পড়েছে পুরো কমিশন!
সরেজমিন নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত থেকে দেখা যায়, দুপুরের পর থেকেই কর্মচারীরা লেক চত্বর সাজাতে থাকেন। সেখানে আসে সোফা, চেয়ার ইত্যাদি। একটু পরই আনা হয় ছয়টি বরশি। ময়দার গুঁটি বানিয়ে তৈরি করা মাছের টোপ।
তিন-সোয়া তিনটার দিকে নির্বাচন ভবন থেকে নেমে আসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব মো. আলমগীর, অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমানসহ অনেকে। ইসির লেকে বড়শি ফেলেই প্রথমে টোপ খাইয়ে মাছ তুলে আনেন সিইসি। অন্যরা যখন একটাও ধরতে পারেনি, সিইসি একাই ততক্ষণে তিনটি তুলে নিয়েছেন নিজের ঝুলিতে। কমিশনার শাহাদাত হোসেন, সচিব আলমগীর ততক্ষণে একটি করে মাছ আটকাতে পেরেছেন।
সিইসির বড়শিতে একটু পরপরই মাছ আটকে যাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশে ব্যস্ত হয়ে পড়ে উপস্থিতি। অনেককে বলতে শোনা যায়-অভিজ্ঞতার একটা বিষয় আছে।
কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকৃত অর্থেই নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপ বা দুশ্চিন্তা নেই। ভালো নির্বাচন হচ্ছে। তাই ছুটির দিনে কাজ করতে এসে কমিশন একটু আনন্দ খুঁজছে মাছ শিকারের মাঝে।
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মাঝে একটা লেক তৈরি করা হয়েছে। ভেতরে আছে ফোয়ারাও। আর এতেই দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির মাছ চাষ করছে ইসি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই লেক থেকেই মাছ তুলে বারবিকিউ পার্টি করেছে কমিশন। এরপর আরও তিনদিন এখান থেকে মাছ শিকার করা হয়েছে। কর্মচারীরা বলেন, স্যারেরা মাছ ধরেন, কিন্তু নিতে চান না। আমরা অনেক সময় দিয়ে দিই।
উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এরশাদপুত্র রাহগির আল মাহি এরশাদ (সাদ), বিএনপির রিটা রহমান, স্বতন্ত্র হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, এনপিপির শফিউল আলম, গণফ্রন্টের কাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মন্ডল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামী লীগ নির্বাচন থেকে জোটের কারণে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এরশাদপুত্রের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন বিএনপির রিটা রহমান। সেই সঙ্গে এ নির্বাচন উত্তাপ হারায় বলে মনে করছেন অনেকে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯২৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান পেয়েছিলেন ৫৩ হাজার ৮৯ ভোট। ভোট পড়েছিল ৫২ দশমিক ৩১ শতাংশ।
রংপুর-৩ আসনটিতে একদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই সম্পূর্ণভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। ভোট শেষ হবে বিকাল ৫টায়।
গত ১৪ জুলাই রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এইচএম এরশাদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ জুলাই ওই আসনটি শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি। পরবর্তীতে ১ সেপ্টেম্বর উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৯
ইইউডি/এমএ