এদিকে সকাল ৯টায় শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ শেষ হয় বিকেল ৫টায়। ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকেই খবর আসতে থাকে ভোটারদের উপস্থিতি খুব কম।
এ অবস্থায় কোনো কাজ না থাকার সময় কাটানোর উপায় বের করে কমিশন। সিদ্ধান্ত হয় নির্বাচন ভবনের লেকে মাছ শিকার করবেন।
দুপুরের পর থেকেই উপরের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কর্মচারীরা নির্বাচন ভবনের লন সাজাতে থাকেন। লনের পশ্চিমেই লেক। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মাঝে লেকের অবস্থান। সেখানে চাষ করা হয়-পাঙ্গাস, তেলাপিয়াসহ কার্প জাতীয় দেশি-বিদেশি মাছ।
লনে একে একে সোফা, চেয়ার ইত্যাদি এনে সাজিয়ে রাখেন কর্মচারীরা। আনা হয় ছয়টি বড়শি। সিইসি কেএম নূরুল হুদা, ইসি মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব মো. আলমগীর ও অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান মাছ ধরবেন। টোপ বানানো হয় ময়দা ভিজিয়ে গুঁটি গুঁটি করে।
দুপুর সোয়া তিনটার দিকে নেমে আসেন সিইসি কেএম নূরুল হুদা, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব মো. আলমগীর ও অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান। সঙ্গে আসেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এমন একটা পরিবেশের সৃষ্টি হয়, যে বাইরে থেকে আসা কারো বোঝার উপায় নেই-সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচন চলছে।
কর্মচারীরা বড়শিতে টোপ লাগিয়ে দেওয়ার পর লেকে ফেললেন তারা। টোপ গিলাতে প্রথম হলেন সিইসি। তুলে আনলেন পাঙ্গাস। এভাবে একে একে তিনটা ধরে ফেললেন কয়েক মিনিটের মাথায়। তখনও অন্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কারো একজনের মুখে বলতে শোনা গেল-অভিজ্ঞতার একটা বিষয় আছে। সিইসি একটা ঝটকা টানে তুলে আনছে পাঙ্গাস কিংবা তেলাপিয়া আর উল্লাসে ফেটে পড়ছে উপস্থিতি। কর্মকর্তাদের কেউ আবার ভিডিও করছেন, ছবি তুলছেন।
সিইসির পরে দ্বিতীয় হলেন ইসি সচিব মো. আলমগীর, তারপর কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। তবে পিছিয়ে রইলেন অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান।
এভাবে ঘণ্টাখানেক মাছ শিকারের পর ক্লান্ত কমিশন বসে গেলেন সোফায়। পানীয় খেয়ে তারা আবার উপরে উঠলেন নিজেদের কামরায়।
এবার নিক্তি এনে মেপে মেপে ব্যাগ বোঝাইয়ের পালা কর্মচারীদের। একজন কর্মকর্তা আবার তা তদারকিও করলেন। ২ মণ মাছ ধরা পড়েছে বলে জানা গেল।
সাড়ে ৪ কেজি, ৪ কেজি ১০০ গ্রাম, ৪ কেজি, ৪ কেজি ২০০ গ্রাম, সাড়ে তিন কেজি এভাবেই ভরা হলো ২০টির মতো থলে।
তখনও ৫টা বাজতে কিছু বাকি। ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে কমিশনারদের গাড়ির চালক এসে মাছে ঠাসা থলে নিয়ে গাড়ি হাঁকিয়ে পথ ধরলেন বাসার।
দায়িত্বরতরা জানান, যুগ্ম সচিব থেকে ঊর্ধ্বন কর্মকর্তা এবং নির্বাচন কমিশনারদের দেওয়া হয়েছে মাছগুলো। এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর লেক থেকে মাছ শিকার করে বারবিকিউ পার্টি করেছে কমিশন। পরবর্তীতে আরও দু’বার হয়েছে মাছ শিকারের আয়োজন। কর্মচারীরা জানান, কমিশনররা মাছ নিতে চান না। তাদের জোর করে অনেক সময় দেওয়া হয়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির অনেক কর্মকর্তা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, কাজের পর উৎসব তো করাই যেতে পারে। কিন্তু ভোট চলাকালীন অবস্থায় এমন উৎসবে মেতে থাকার নজির নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে নেই। আবার মাছ শিকার করে ভোট শেষ হওয়ার আগেই বাড়ি ফিরে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক আচরণ।
তারা বলেন, নির্বাচনে সব ক্ষমতা রিটার্নিং কর্মকর্তার হাতে ন্যস্ত থাকলেও ইসি সুপারভিশনের দায়িত্বে থাকেন। নির্বাচন একটা স্পর্শকাতর বিষয়। যেকোনো সময় যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এরশাদপুত্র রাহগির আল মাহি এরশাদ (সাদ) বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। আর তার নিকটতম প্রতিন্দ্বী প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির রিটা রহমান।
নির্বাচনে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ (স্বতন্ত্র), শফিউল আলম (এনপিপি), কাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ (গণফ্রন্ট) এবং তৌহিদুর রহমান মন্ডল (খেলাফত মজলিস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
আওয়ামী লীগ নির্বাচন থেকে জোটের কারণে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এরশাদপুত্রের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির রিটা রহমান। সেই সঙ্গে এ নির্বাচন উত্তাপ হারায় বলে মনে করছেন অনেকে।
রংপুর-৩ আসনটিতে একদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই সম্পূর্ণভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটগ্রহণ করা হয়। গত ১৪ জুলাই রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এইচএম এরশাদ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ জুলাই ওই আসনটি শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি। পরবর্তীতে ১ সেপ্টেম্বর উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৯
ইইউডি/এমএ