ইসি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালে ল্যাপটপ চুরি করে বেশকিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী রোহিঙ্গা ও বিদেশি নাগরিকদের এনআইডি সরবরাহ করে আসছিল। এছাড়াও বৈআইনিভাবে এনআইডি সংশোধনের কাজে জড়িত ছিল।
সম্প্রতি লাকী বেগম নামের একজন স্মার্টকার্ড আনতে গেলে, মূল সার্ভার থেকে ধরা পড়ে তার এনআইডি সঠিক নয়। জিজ্ঞাসাবাদে চিহ্নিত হয়েছে- তাকে বৈধ এনআইডি দেওয়া হয়নি। তাই তাকে পুলিশে দেওয়া হয়।
এরপরই নড়েচড়ে বসে ইসি। চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে মিয়ানমার থেকে আসা ৬১ জন রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। যাদের তথ্য লোকাল সার্ভারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা নিবন্ধন কর্মকর্তা অগোচরে এই অপকর্মটি করেন। যদিও কোথাও কোথাও কর্মকর্তারাও এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এদের বেশিরভাগই আগে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন।
রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসার পর নির্বাচন কমিশনের বিশেষ তদন্ত কমিটি যে তথ্য পেয়েছে, তাতে শুক্র ও শনিবার ভোটার করে নেওয়ার সরঞ্জাম (মডেম ও সিগনেচার প্যাড) বাড়িতে নিয়ে গিয়ে এই অপকর্মটি করতেন কর্মচারীরা। অথচ মডেম থাকার কথা নিবন্ধন কর্মকর্তার কাছে ও তার অফিসে। এই অবস্থায় তাদের সুপারিশ রয়েছে- ভোটার তালিকা আইনের যথাযথ প্রয়োগের। এক্ষেত্রে ভোটার তালিকা প্রণয়নের সব সরঞ্জাম উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছেই রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া সব কর্মকর্তাকে তাদের নিজস্ব ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড নিজেদেরই ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
এসব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার পাশপাশি ভবিষ্যতে যাতে পুরো এনআইডি কর্যক্রমকে শতভাগ সুরক্ষিত রাখা যায়, সেজন্যই বসানো হবে ফেইস রিকগনিশন ডিভাইস।
নির্বাচন কমিশনের ডাটা সেন্টার, রেজিস্ট্রেশন সেন্টার, কাস্টমাইজেশন সেন্টার, সার্ভারসহ এনআইডি সব দফতরেই এই যন্ত্র বসানো হবে। এতে প্রবেশ পথের ওপরে লাগানো ক্যামেরার মাধ্যমে নিমিষেই শনাক্ত হবে ব্যক্তির পরিচিতি।
ইসির কর্মী হলে কন্ট্রোল রুমের মনিটরে ভেসে ওঠবে মুখমণ্ডলে বর্গাকৃতির সবুজ রেখা। আর ব্যাখ্যায় লেখা উঠবে তার পরিচিতি। বহিরাগত হলে সবুজ রেখার পরিবর্তে ওই ব্যক্তির মুখমণ্ডলে ভেসে উঠবে লাল রঙের বর্গাকৃতির রেখা। ব্যাখ্যা লেখা থাকবে বহিরাগত।
শুধু তাই নয়, কোনো ব্যক্তি কোথাও বসে আছেন, কার কাছে গেছেন, সে তথ্যও পৌঁছে যাবে কন্ট্রোল রুমে। অপরিচিত হলে নোটিফিকেশন যাবে-কে সেই ব্যক্তি? কীজন্য এসে কী করছেন? সঙ্গে সঙ্গে ইসি নিয়োজিত ব্যক্তি পৌঁছে যাবেন তার কাছে।
এসবের বাইরেও এনআইডি নিয়ে অপকর্মের চারণভূমি মাঠ প্রশাসনে থাকছে কঠোর নজরদারি। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে জন্য সব উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে বসানো জন্য ১৫ হাজার সিসিটিভি। পর্যায়ক্রমে এসব কার্যালয়েও বসবে ফেইস রিকগনিশন ডিভাইস।
এ বিষয়ে ইসির এনআইডি অণুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এমন ব্যবস্থা করছি, যেন সকলেই নজরদারিতে থাকে। ফেইস রিকগনিশন ডিভাইস পর্যাক্রমে সব জায়গায় বসানো হবে। আর উপজেলায় আপাতত থাকছে সিসিটিভি।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৯
ইইউডি/জেডএস