ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের এনআইডি সরবরাহে কেবল আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত আছে, তাই নয়। এদের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জড়িত আছেন।
রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং এনআইডি তৈরি করে নিয়ে পাসপোর্ট বাগিয়ে নেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। যাদের বরবারই সহায়তা করেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
২০১৪ সালে সংসদ সদস্য বদিসহ বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততার কথা ওঠে এসেছিল একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। যেখানে বলা হয়েছিল, জনপ্রতিনিধিরা ৩৮৯ জন রোহিঙ্গাকে ভোটার হতে সহায়তা করেছিল।
আরও পড়ুন...রোহিঙ্গা মদদদাতাদের শীর্ষে এমপি বদী
সে সময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে বিষয়টি তদন্তের জন্য দেওয়া হলে সহায়তাকারীদের নামে কোনো প্রতিবেদন আসেনি। কেবল ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৩৮৯ জনের মধ্যে ৯৮ রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করে ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তনের সুপারিশ করে।
আরও পড়ুন...মদতদাতা বদির বিষয় চেপে যাচ্ছে ইসি
সম্প্রতি লাকী বেগম নামে একজন স্মার্টকার্ড আনতে গেলে, মূল সার্ভার থেকে ধরা পড়ে তার এনআইডি সঠিক নয়। জিজ্ঞাসাবাদে চিহ্নিত হয়েছে- তাকে বৈধ এনআইডি দেওয়া হয়নি। তাই তাকে পুলিশে দেওয়া হয়।
এরপরই নড়েচড়ে বসে ইসি। চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে মিয়ানমার থেকে আসা ৬১ জন রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। যাদের তথ্য লোকাল সার্ভারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও নিবন্ধন কর্মকর্তা অগোচরে এই অপকর্মটি করেন। যদিও কোথাও কোথাও কর্মকর্তারাও এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এদের বেশিরভাগই পূর্বে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। এদের অনেককেই ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে ইসি।
রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসার পর নির্বাচন কমিশনের বিশেষ তদন্ত কমিটি যে তথ্য পেয়েছে, তাতে শুক্র ও শনিবার ভোটার করে নেওয়ার সরঞ্জাম (মডেম ও সিগনেচার প্যাড) বাড়িতে নিয়ে গিয়ে এই অপকর্মটি করতেন কর্মচারীরা। অথচ মডেম থাকার কথা নিবন্ধন কর্মকর্তার কাছে ও তার অফিসে। এই অবস্থায় তাদের সুপারিশ রয়েছে-ভোটার তালিকা আইনের যথাযথ প্রয়োগের। এক্ষেত্রে ভোটার তালিকা প্রণয়নের সব সরঞ্জাম উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছেই রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া সব কর্মকর্তাকে তাদের নিজস্ব ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড নিজেদেরই ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
এসব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার পাশপাশি ভবিষ্যতে যাতে পুরো এনআইডি কার্যক্রম শতভাগ সুরক্ষিত রাখা যায়, সেজন্যই বসানো হচ্ছে ফেইস রিকগনিশন ডিভাইস।
নির্বাচন কমিশনের ডাটা সেন্টার, রেজিস্ট্রেশন সেন্টার, কাস্টমাইজেশন সেন্টার, সার্ভারসহ এনআইডি সব দফতরেই এই যন্ত্র বসানো হবে। এতে প্রবেশ পথের উপরে লাগানো ক্যামেরার মাধ্যমে নিমিষেই সনাক্ত হবে ব্যক্তির পরিচিতি। আর প্রত্যেক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থাকছে সার্বক্ষণিক সিসিটিভি।
এতো ব্যবস্থা নেওয়ার পর রোহিঙ্গাদের পেছন থেকে সহায়কারীদের শাস্তির আওতায় আনতে কোনো উদ্যোগ না নেয়াটাকে সংস্থাটির কর্মকর্তারা গলদ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ইসির এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের অনেক জায়গায় অনেকে হয়তো জড়িত আছে। তবে আমরা সেদিকে নজর দিচ্ছি না। আমরা নিজেদেরটাই দেখছি আগে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৯
ইইউডি/এনটি